বিশেষ প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত ৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘মুখোশ’ উন্মোচনের হুমকি দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতা ও সংসদ সদস্য শাজাহান খান। সাবেক নৌমন্ত্রীর ওই হুমকির বিষয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাজাহান খানকে তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে বলেছেন, অন্যথায় ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান এমপি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে আমাকে এবং নিরাপদ সড়ক চাইসহ আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচারের মাধ্যমে অসত্য, বানোয়াট ও উদ্ভট কিছু প্রসঙ্গ টেনে এনে চরিত্রহননের অপচেষ্টা চালিয়েছেন। শাজাহান খানের এমন মিথ্যাচার শুধুমাত্র নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্যই বলেছেন। তিনি এসব মানহানিকর কথা বলেছেন, জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য। সেই সাথে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কে বাধাগ্রস্ত করতে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে অবান্তর প্রশ্নের অবতারণা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, শাজাহান খান যখন এসব প্রশ্নের অবতারণা করেছেন তখন বিশেষ একটি প্রয়োজনে আমি ভারতে অবস্থান করছিলাম, যে কারণে তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে পারেননি। তবে নিরাপদ সড়ক চাই-এর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং শাজাহান খানের এমন মিথ্যাচারের জন্য তাকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, হয়তো তার প্রমাণ উপস্থাপন করুন অথবা ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শাজাহান খান তার বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ জাতির সামনে হাজির করেননি এবং ক্ষমাও চাননি।
শাজাহান খানের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আমি যখন দেশের বাইরে ছিলাম তখন কেন এসব প্রশ্নের অবতারণা? আমি মনে করি এটা পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের সামিল। যদি সেই সৎ সাহস থাকে তাহলে সামনে এসে প্রমাণ নিয়ে বসুন। প্রয়োজনে লাইভ টক শো হবে। পুরো জাতি দেখবে।কিন্তু তা না করে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে তিনি নিজেকে জাহির করতে চাইছেন। স্বজন হারিয়ে সকলের সহযোগিতায় নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছি। কিন্তু এখানে কেন আমার পরিবারকে টেনে আনা হয়েছে? যেহেতু টেনে আনা হয়েছে এখন তার দায়িত্ব হলো স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করা। আমি মনে করি দুর্বল চিত্তের লোকরাই দম্ভোক্তি দেখিয়ে বিভ্রান্তকর চটকদার মসলা একজনের চরিত্র হরণের নিচু মানসিকতার পরিচয় দিয়ে থাকে।’
শাজাহান খানের এমন মিথ্যাচারে তিনি বিস্মিত হতবাক ও তীব্র নিন্দা জানান। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, শাজাহান খান আমার সম্পর্কে জঘন্যতম একটি মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশে পান, সেখান থেকে কত টাকা পুত্রবধূর নামে নেন, সেই হিসেবটা আমি জনসম্মুখে তুলে ধরব।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমিও বলছি তুলে ধরুন, জাতির সামনে তুলে ধরতে না পারলে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আমি শঙ্কিত, যে টাকার হদিস তিনি দিতে চাইছেন সেই টাকা তো ছুঁয়ে দেখা দূরের কথা আমি ও আমার সংগঠন চোখেও দেখিনি। যদি তিনি দেখে থাকেন, জেনে থাকেন তাহলে হদিস দিন। কারণ, আমাদের নামের টাকা-পয়সা অন্য কেউ নিয়ে যায়নি তো? শাজাহান খান সাহেবকে বিষয়টা পরিষ্কার করতে হবে। যেটা সত্য সেটা তুলে ধরতে হবে। নতুবা এ টাকার বিষয়টি আমিও তার দিকে ছুঁড়ে দিতে পারি। কারণ, তিনি যেভাবে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন তাতে আমার সন্দেহ হওয়াটা অমূলক নয়।
আমি আবারও তাকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিচ্ছি। এ সময়ের মধ্যে জাতির সামনে তথ্য তুলে ধরতে হবে নতুবা আমি আইনের পথে হাঁটবো। আমরা ইতোমধ্যে আইনজীবীর সাথে কথা বলেছি, প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, একটি কথা না বললেই নয়, প্রধানমন্ত্রী যখন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যুগোপযোগি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন তখন কী করে শাজাহান খান সরকারে থেকে আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সে প্রশ্ন জাতির কাছে রাখছি। আমরা মনে করি, সড়ক পরিবহন আইনকে বাধাগ্রস্ত করতে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে শাজাহান খান অবান্তর এসব প্রশ্নের অবতারণা করছেন। আমরা বিশ্বাস করি দেশের মানুষ হিসেবে যোগ্য জবাব দেব।
তিনি বলেন, আমি কারো পক্ষে বা বিপক্ষে নই। আমি আপামর মানুষের সাথে কথা বলি। সড়ক পরিবহন আইনটি নিয়ে আলােচনা শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। আইনের খসড়া সরকার ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখে দীর্ঘদিন। অংশীজনদের এ আইনে সম্পৃক্ত করা হয়। জনগণের মতামত দেয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছিল।
গণপরিবহন সেক্টরের চালক মালিক শ্রমিকদের মতামতের দাবি-দাওয়া শুনেছে সরকার। সকলের মতামতের ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের যুগোপযোগি করার চেষ্টা করেছে সরকার। আমি নিসচার পক্ষ থেকে দেশের সড়ক নিরাপদ করার লক্ষ্যে আইনের বিষয়ে আমাদের মতামত তুলে ধরেছিলাম। আইন প্রণয়নে আমার কোনো সুযোগ ছিল না। তারপরও আমাকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক কথা বলা হচ্ছে কেন?
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, শাজাহান খান বলে থাকেন, আমি নাকি সাধারণ মানুষের কাছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কথা বলে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করি। আমি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি, কবে কখন কোথায় আমি সরাসরি পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কথা বলি সেটা প্রমাণ করতে হবে। আমি সবসময় বলে আসছি, আমি কথা বলি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, আমি কথা বলি অনিয়মের বিরুদ্ধে, আমি কথা বলি বিশৃঙ্খল পরিবেশের বিরুদ্ধে। সেটা যদি কারো বিপক্ষে যায় তাহলে কি খুব বেশি অন্যায় হবে?
উল্টো প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টরে বছরে বিভিন্ন খাতের নামে যে টাকা উত্তোলন বা চাঁদা আদায় করা হয় সেই টাকার কত অংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে, কয়টা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, কয়টি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, কয়টি আবাসন পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে শ্রমিকদের জন্য, তাদের জীবনমান উন্নয়নে এ টাকার কত অংশ ব্যয় করা হয়? কতজন চালক তৈরি বা বিদ্যমান চালকদের দক্ষ করার কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
তিনি বলেন, শাজাহান খান প্রশ্ন করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই কতজন দক্ষ চালক তৈরি করেছি? আমি বলতে চাই, আমরা নতুন চালক তৈরি করার জন্য বিনা ফিতে দরিদ্র এসএসসি পাস বেকার শ্রেণিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের লাইসেন্স পাইয়ে কর্মক্ষম করার উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে অংশীদার হয়েছি। পাশাপাশি বিদ্যমান চালকদের দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার চালককে প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছি।