কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রথম সমাবর্তনে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ১৩ শিক্ষার্থী। গতকাল ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে এ স্বর্ণপদক গ্রহণ করবেন পদকপ্রাপ্তরা। রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকজয়ীরা শিক্ষাজীবনে অসামান্য অবদানের জন্য এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ১৩জন শিক্ষার্থী মধ্যে বরুড়ার ৩জন।কুমিল্লা বিশ্বিবিদ্যালয়ে অসাধারণ একাডেমিক ফলাফলের জন্য রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক বরুড়ার তিন মেয়ে হলেন আমেনা বেগম, খাদেজা বেগম এবং মাহিনুর আক্তার। স্নাতক পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের আমেনা বেগম, গণিত বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের খাদিজা বেগম এবং গণিত বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাহিনুর আক্তার। মিসেস আমেনা বেগম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়েই স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন।
আমেনা ও খাদিজা হলেন আপন দুইবোন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আমেনা বেগম ও গণিত বিভাগের খাদিজা বেগম। দুজনই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বরুড়া উপজেলা আদ্রা ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মোহাম্মদ হানিফের মেয়ে আমেনা ও খাদিজা।খাদিজা বেগম ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে গণিত বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪–এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন। বলা বাহুল্য, স্নাতকোত্তরে তাঁর ব্যাচে তিনিই প্রথম। স্নাতকে তিনি সিজিপিএ–৪–এর মধ্যে ৩ দশমিক ৮০ পেয়ে বিভাগে দ্বিতীয় হন।বর্তমানে ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।একই সঙ্গে তিনি বুয়েটে এমফিলও করছেন। স্নাতকোত্তরে বিজ্ঞান অনুষদের সেরা ফল করায় তিনি চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।খাদিজা বলেন,অনেক কষ্ট,পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের পর এমন
সাফল্য এসেছে। ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল, সেটি পূরণ হয়েছে। তবে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার আনন্দ অন্য রকম। চেনা ক্যাম্পাসে থাকার মজা আলাদা।খাদিজার স্বামী মেহেদী উল হাসান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) গণিত ও পরিসংখ্যানের প্রভাষক।ছোট বোন আমেনা প্রকৌশল অনুষদ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুটিতেই চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এর আগে আমেনা ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক (২০১৬ সালের জন্য) পেয়েছেন। ২০০৯-১০ সালে স্নাতকে সিজিপিএ–৪–এর মধ্যে ৩ দশমিক ৯৬ পেয়ে প্রথম হন তিনি। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ–৪–এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমেনা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তাঁরও স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় মহাখুশি তিনি। আমেনা অবশ্য বললেন, ‘আমার চেয়ে আপু (খাদিজা) বেশি মেধাবী।’ আমেনার স্বামী রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মো. সারোয়ার আহমাদ। খাদিজা ও আমেনার বাবা বরুড়ার এমরানিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘সন্তানদের ভালো পড়াশোনার জন্য সব সময় আমি তৎপর ছিলাম। এখন ওদের দেশকে দেওয়ার পালা। আমি ওদের বিজ্ঞান বিভাগে পড়িয়েছি। ওরা সেরাটাই দিয়েছে। মেয়ে হয়ে পিছিয়ে থাকেনি।’
অন্যদিকে মিসেস মাহিনুর আক্তার হলেন বরুড়া উপজেলা আগানগর ইউনিয়নের সরপতি গ্রামের হাজী মহর আলী তৃতীয় মেয়ে। তিনি কুমিল্লা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ১১-১২ সেশনের গণিত বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। স্নাতক গণিত বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪–এর মধ্যে ৩.৮৭ পেয়েছেন। এবং স্নাতকোত্তোরে তিনি সিজিপিএ–৪–এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন। তিনি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।
কুমিল্লা বিশ্বিবিদ্যালয় গণিত বিভাগ ভর্তি হওয়ার পরে স্বামির সংসার সামলানোর দায়ভার। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার মধ্যে দুই সন্তানের জননী। লেখাপড়া নিয়ে একটা সময় খুব হতাশ ছিলাম কিন্তু আমার স্বামী সে জায়গা থেকে উঠিয়ে এনেছেন। পরম যত্ন আর ভালোবাসা নিয়ে সবসময় পাশে থেকেছেন যার ফল আজকের এই স্বর্ণপদক। স্বর্ণপদক পাবো এমনটা হয়তো ভাবিনি কিন্তু সবসময় ভালো কিছু করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের সহযোগিতা আমাকে সফলতা এনে দিয়েছে। সবার সমন্বিত সহযোগিতা আর আমার একান্ত প্রচেষ্টাই আমার সফলতার মূলমন্ত্র। বিশেষভাবে আমার বাবা-মা, স্বামি, শিক্ষক, ফুফাতো ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা।মিসেস মাহিনুর স্বামি কাজী বিল্লাল হোসেন। তিনি সোনালি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। এখন দুই ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন এবং নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।