বিনোদন ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে প্রাচ্যনাটের আলোচিত প্রযোজনা ‘পুলসিরাত’। আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সেলিম আল দীন মুক্ত মঞ্চে প্রদর্শিত হবে এ নাটক।
ফিলিস্তিনি লেখক ঘাসান কানাফানির ‘মেন ইন দ্য সান’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে নাটকটি। এর অনুবাদ করেছেন মাসুমুল আলম। নাট্যরূপ দিয়েছেন মনিরুল ইসলাম রুবেল। নির্দেশনায় রয়েছেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন।
তিন বয়সের তিনজন মানুষ। আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য নিয়ে ফিলিস্তিন থেকে কুয়েতে পাড়ি জমাতে চায় তারা। সারা বিশ্বে মানবপাচারের বিষয়টি উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে নাটকটির গল্প। এমন গল্প বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে নির্দেশক কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই বিষয়টি এখন প্রাসঙ্গিক। এই সমস্যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। সিরিয়া, ইরাকের দিকে তাকালে শরণার্থী সমস্যা দেখতে পাই। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে আছে। সব মিলিয়ে এটি এখন বার্নিং ইস্যু। এই সমস্যাটা আমাদের মনে এক প্রকার দাগ কেটেছে। সেখান থেকেই মূলত নাটকের গল্পের বিষয় বেছে নিয়েছি।’
উপন্যাসটির লেখক ঘাসান কানাফানির জীবনও অনেক কঠিন ছিল। প্যালেস্টাইন থেকে তিনি লেবানন গিয়েছিলেন। লেবানন থেকে সিরিয়া। সেখানে বাস্তু শিবিরে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এক বোমা হামলায় তার মৃত্যু হয়। তার সংগ্রামের জীবনও প্রেরণা জুগিয়েছে। তা ছাড়া সবাই যখন একদিকে ছুটছেন, সেখান থেকে একটু ভিন্ন দিকে হাঁটার পরিকল্পনা থেকে নাটকের বিষয়টি প্রাচ্যনাট বেছে নিয়েছে বলেও জানান ইমন।
গল্প প্রসঙ্গে নির্দেশক কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন জানান, ভাগ্যান্বেষণের জন্য ফিলিস্তিন থেকে স্বপ্নের কুয়েতে পাড়ি জমাতে চায় আবু কায়েস, আসাদ ও মারওয়ান। তিনজন আলাদা প্রজন্মের হলেও এক জায়গায় মিল—তারা সবাই বিড়ম্বিত উদ্বাস্তু। আবু কায়েস দুই সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে বন্ধুর পরামর্শে স্বচ্ছল জীবনের আকাঙ্ক্ষায় কুয়েত পাড়ি দিতে চায়। তার স্বপ্ন, সন্তানেরা স্কুলে পড়াশোনা করবে। বয়সের কারণেই হোক বা চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যই হোক, স্বভাবে বেশ নরম ও কিছুটা ভীতু স্বভাবের সে। তার ঠিক বিপরীত চরিত্রের আসাদ। বয়সে তরুণ। কিছুটা রাগী এবং স্বভাবে বেশ কৌশলী। এর আগেও সীমান্ত পার হয়ে অবৈধ পথে কুয়েত যাওয়ার চেষ্টা সে করেছিল। নিশ্চিত ও উন্নত ভবিষ্যৎ, চাচাতো বোনকে বিয়ে করার স্বপ্ন আবার একই সঙ্গে চাচার অপমান তাকে যুগপৎ তাড়িত করে।
অন্যদিকে ষোল বছরের মারওয়ান স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে নিজের পরিবারের দায়িত্বের চাপে পাড়ি দিতে চায় কুয়েতে। তার বড় ভাই কুয়েত থাকে। এক সময় পরিবারের জন্য টাকা পাঠালেও বিয়ে করে তা বন্ধ করে দেয়। তার বাবা সন্তানদের ভরণ পোষণে অপারগ হয়ে স্বচ্ছল জীবনের আশায় এক পঙ্গু মহিলাকে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যায়। তাই মারওয়ান পরিবারকে বাঁচাতে অর্থ উপার্জনের স্বপ্ন নিয়ে কুয়েত পাড়ি দিতে চায়। এক পর্যায়ে আগস্ট মাসের প্রচন্ড গরমে, রোদে পুড়ে মরুভূমির পথে শুরু হয় তাদের যাত্রা। তিনটি হতভাগ্য বিড়ম্বিত জীবন ছুটে চলে স্বপ্নময় এক স্বচ্ছল জীবনের প্রত্যাশায়, ছুটে চলে এক পুলসিরাত!
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন—আজাদ আবুল কালাম, শাহরিয়ার সজিব, মনিরুল ইসলাম রুবেল, সাইফুল ইসলাম জার্নাল, চেতনা রহমান ভাষা প্রমুখ। সেট ডিজাইন করেছেন শাহীনুর রহমান, সংগীত পরিকল্পনায় নীল কামরুল, আলোক পরিকল্পনায় বাবর খাদেম।