বিনোদন ডেস্ক: শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন তার স্বামী অনিক মাহমুদ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রায় চার বছর আগেই তিনি এ বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম আয়েশা।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি আয়েশা। তার কাছে বিষয়টি জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। তবে এ বিয়ের বিষয়ে অনিকের সেই আত্মীয়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন।
পরবর্তীতে আবারও জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনিক কী করেছে সেটা ও নিজেই বলবে। এখানে আমার কিছু বলার নেই।’
অবশেষে ভেঙে গেল এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূরের (শারমীন নাহিদ নূপুর) সংসার। গত কয়েক বছর ধরেই অবশ্য গুঞ্জন ছিল, স্বামী অনিকের সঙ্গে থাকছেন না তিনি।
অনেকে বলেছেন, সংসার ভেঙে গেছে। তবে সেসব গুঞ্জন বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন এ নায়িকা। এবার সেসব গুঞ্জন নিজেই সত্যি প্রমাণ করলেন শাবনূর।
বনিবনা না হওয়ায় স্বামী অনিক মাহমুদ হৃদয়কে তালাক দিয়েছেন তিনি। ২৬ জানুয়ারি এ নায়িকার স্বাক্ষর করা একটি তালাক নোটিশ অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে স্বামীর ঠিকানায়।
তালাক নোটিশের অনুলিপি অনিকের এলাকার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং কাজী অফিস বরাবরও পাঠানো হয়েছে। নোটিশে সাক্ষী হিসেবে নুরুল ইসলাম ও শামীম আহম্মদ নামে দুজনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন শাবনূর। তালাক নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বাধ্য হয়েই তালাক নোটিশ পাঠিয়েছি। আসলে আমার কিছু করার নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আইজান (শাবনূরের সন্তান) জন্মের পর থেকেই আমাদের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ছয়টা বছর নীরবে তার অত্যাচার সহ্য করেছি।
তিনি বলেন, চেয়েছি সংসারটা আগলে রাখব। কিন্তু পারিনি। আইজান পৃথিবীতে আসার পরপরই বদলে যেতে থাকে অনিক। স্বামী হিসেবে তার দায়িত্বহীনতা ও সংসারের প্রতি উদাসীনতা আমাকে হতাশ করে তোলে। তার মধ্যে নানা পরিবর্তন লক্ষ করলাম। একেবারেই বদলে গেছে সে।
কিন্তু আপনি কী স্বামীকে শোধরানোর চেষ্টা করেননি কিংবা সংসার টিকিয়ে রাখতে কোনো উদ্যোগ নেননি? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাবনূর বলেন, অবশ্যই চেষ্টা করেছি। অভিমান করে তার থেকে দূরেও গেছি। ভাবলাম হয়তো মায়ার কারণে হলেও আমাদের কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু না, আমার সেসব ভাবনা ভুল ছিল।
তিনি জানান, অনেক আগে থেকেই আমরা আলাদা থাকছি। দফায় দফায় বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। বাধ্য হয়েই ২৬ জানুয়ারি অনিককে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছি।
কিন্তু আপনি তো আগে বরাবরই বলে এসেছেন আপনার সংসারে কোনো অশান্তি নেই, সুখেই আছেন আপনারা। তাহলে এতদিন পর এসে এখন কেন এসব অভিযোগ করছেন? জানতে চাইলে শাবনূর বলেন, ‘স্ত্রী হিসেবে এতদিন আমি তার সম্মান রক্ষা করতে চেয়েছি। পাশাপাশি আমারও সম্মান আছে। চেষ্টা করেছি তাকে বোঝাতে। তাই বাধ্য হয়ে কিছুটা মিথ্যা বলেছি। শেষ পর্যন্ত আর পারছি না বলেই তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর যেটাকে অভিযোগ বলেছেন সেটা আমি গণমাধ্যমে করিনি। আমার প্রতি যেসব অন্যায় করা হয়েছে সেটা তালাক নোটিশে উল্লেখ করেছি।’
এদিকে শাবনূরের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীও তালাক নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেই বান্ধবী যুগান্তরকে বলেন, অনিকের সঙ্গে ঝামেলার বিষয়টি আমি শুনেছি। শাবনূর চেষ্টা করেছে সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু অনিকের পক্ষ থেকে সে রকম কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
‘মূলত শাবনূরের ঘরে সন্তান জন্মের পর থেকেই অনিকের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তার। এ সন্তান জন্মের বছরখানেক পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন। এরই মধ্যে শাবনূরকে না জানিয়ে গোপনে আরেকটি বিয়েও করেছেন অনিক।’
তালাকের নোটিশ ও হলফনামা প্রস্তুতকারী অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি অনিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করেছেন শাবনূর। ৪ ফেব্রুয়ারি অনিকের উত্তরা এবং গাজীপুরের বাসার ঠিকানায় সেই নোটিশ পাঠানো হয়। ‘উত্তরার নোটিশটি কেউ রিসিভ না করার ফেরত আসে। তবে গাজীপুরের ঠিকানায় পাঠানো নোটিশ এখনও ফেরত আসেনি। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি বিবাদী সেটি পেয়েছেন এবং গ্রহণ করেছেন। আইনগতভাবে ৯০ দিন পর তাদের এ তালাক কার্যকর হবে।’
ঠিক কী কারণে এতদিন অস্বীকার করার পরও শেষতক স্বামীকে তালাক দিয়েছেন শাবনূর সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত নোটিশে উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘আমার স্বামী অনিক মাহমুদ হৃদয় সন্তান এবং আমার যথাযথ যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে না। সে মাদকাসক্ত। অনেকবার মধ্যরাতে মদ্যপ অবস্থায় বাসায় এসে আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমাদের ছেলের জন্মের পর থেকে সে আমার কাছ থেকে দূরে থাকছে এবং অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে আলাদা বসবাস করছে। একজন মুসলিম স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী যে ব্যবহার করে অনিক সেটা করছে না, উল্টো নানাভাবে আমাকে নির্যাতন করে।
‘এসব কারণে আমার জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। চেষ্টা করেও এসব থেকে তাকে ফেরাতে পারিনি। বরং আমার সন্তান এবং আমার ওপর নির্যাতন আরও বাড়তে থাকে। উপরোক্ত কারণগুলোর জন্যই তার সঙ্গে আমার আর বসবাস করা সম্ভব নয় এবং আমি কখনও সুখী হতে পারব না। তাই নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং সুন্দর জীবনের জন্য তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই। মুসলিম আইন এবং শরিয়ত মোতাবেক আমি তাকে তালাক দিতে চাই। আজ থেকে সে আমার বৈধ স্বামী নয়, আমিও তার বৈধ স্ত্রী নই।’
এদিকে তালাক নোটিশের বিষয়ে শাবনূরের স্বামী অনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রজি হননি এবং পরবর্তীতে আর ফোন ধরেননি।
তবে তার খুব কাছের এক আত্মীয় (মামা) জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের কোনো নোটিশ পাননি। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমরা তালাকের বিষয়ে যেসব কারণ জানতে পেরেছি অর্থাৎ শাবনূর যেসব অভিযোগ করেছেন তার সবটা সঠিক নয়।’
তাহলে অনিক কেন এসব নিয়ে কথা বলছেন না, জানতে চাইলে সেই আত্মীয় বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সে খুব বিব্রত। এমনিতেই ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সে মিডিয়ায় কথা বলতে অপারগ। তারপরও সময় হলে বিস্তারিত জানাবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিক মাহমুদ হৃদয় নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আংটি বদল করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। এরপর ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন।
সেই সংসারে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইজান নিহান নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। এ সন্তানকে নিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় অস্ট্রেলিয়ায় কাটান এ চিত্রনায়িকা। দেশটির নাগরিকত্বও পেয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।