অনলাইন ডেস্ক : শুধু গবেষণা করলেই চলবেনা, এ গবেষণার ফলাফলটা কী, সেটাও জানতে চাই বলে জানিয়েছেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেটা যে দেশের কাজে লাগছে সেটাও আমরা নিশ্চিত হতে চাই।
বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ এবং বিজ্ঞানি ও গবেষকদের জন্য গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এ ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দেশের বিজ্ঞান গবেষণায় এ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি জানতে চেয়েছি- ‘গবেষণার জন্য যে অর্থ ব্যয় করছি তার রেজাল্টটা কী, আমরা দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, কেবল গবেষণা করাটাই যথেষ্ট নয়। গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারলেই সে গবেষণা স্বার্থক হবে। যাদের স্কলারশিপ দিচ্ছি এবং যারা গবেষণা করছেন তাদের একটা ডাটাবেজ হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, কার কি গবেষণালব্ধ জ্ঞান আছে, সেটাকে আমার দেশের উন্নয়নে কোথায় কিভাবে কাজে লাগাতে পারি এবং সেই সুযোগ তাদের জন্য সৃষ্টি করে দেওয়া দরকার। তাহলে যেধরনের কাজে পারদর্শিতা অর্জন করছেন তাদের সেই ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারবো।
আইয়ুব সরকারের সময় করে যাওয়া (পাকিস্তানের মার্শাল ল’ সরকার) স্কুলের নবম শ্রেণি থেকেই বিজ্ঞান, কলা এবং পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য শাখায় বিভাজনের বিষয়টি স্কুলে না রাখার বিষয়ে তার নিজস্ব অভিমত পূণর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, এটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। কারণ, শুরু থেকেই বিজ্ঞান চর্চাটা থাকা দরকার। আমাদের শিক্ষার্থীরা সব বিষয়েই জানবে এবং এসএসসি পাস করার পর তারা তাদের বিষয়টা ভাগ করে নেবে, কোন বিষয়ে সে বিশেষায়িত হবে, জ্ঞান লাভ করবে।
প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তি জীবনের একটি অভিজ্ঞতার উদাহারণ টেনে বলেন, আমি চাই স্কুলে আর এই ভাগটা থাকবে না, স্কুলে যারা যাবে তারা সব পড়বে। কলেজে যেয়ে তারপর ভাগ হবে। সেটাই আমি করতে চাই এবং এজন্য আমি আপনাদের সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিজ্ঞানিদের সমর্থনটা সবসময় দরকার হয়, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অতীতের দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, একসময় বাংলাদেশকে সবাই অবহেলার চোখে দেখতো। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ বিজয়ী দেশ। সেই দেশকে কেউ অবহেলার চোখে দেখবে এটা কখনো মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সে কারণেই সব প্রচেষ্টা চালিয়েছি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা যেন এগিয়ে যেতে পারে এবং ভূমিকা রাখতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারে না কারণ, কারো কাছে হাত পেতে আমরা চলি না।
তিনি বলেন, আমরা বাজেট সাতগুণ বৃদ্ধি করেছি, স্বাক্ষরতার হার ৭৩ ভাগে বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়েছি, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি, সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে।
আর যেন বাংলাদেশ থমকে না দাঁড়ায় সে দায়িত্ব দেশের বিজ্ঞানিদের নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শিশুদের যেন আমাদের মতো ভুগতে না হয়। তারা যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যত, একটা সুন্দর দেশ পায়। বিশ্বের দরবারে যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে। বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দেশ, এ পরিচয়ে যেন বসবাস করতে পারে। সেজন্য তার সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গ্রামের অর্থনীতিকে আমরা আরও শক্তিশালী করছি। গ্রামের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ তত এগিয়ে যাবে।
এ বছর প্রায় ৩ হাজার ৮শ’র বেশি শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্টের আওতায় বঙ্গবন্ধু এবং এনএসটি ফেলোশিপ ও গবেষণা অনুদান দেওয়া হয়। এরমধ্যে নির্বাচিত কয়েকজনের হাতে অনুষ্ঠানে চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আনোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক, ফেলোশিপ এবং অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্টের বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে এমএস, পিএইচডি এবং পিএইচডি-উত্তর অধ্যয়ন/গবেষণার জন্য ৬৪ জনকে, ৩ হাজার ২০০ জনকে এনএসটি ফেলোশিপ এবং ৫৬১ প্রকল্পের জন্য ৫৬১ জনকে গবেষণা অনুদান দেওয়া হয়েছে।