ক্রীড়া প্রতিবেদক : বিশ্বের ২০৮টি দেশ ও দুটি আন্তর্জাতিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। বাংলাদেশও রয়েছে এই তালিকায়। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। করোনার সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ প্রথম দফায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশে। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
লকডাউনের কারণে দিনমজুর, প্রতিবন্ধী ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা বিপাকে পড়েছে। দিন এনে দিন খাওয়া এই মানুষগুলোকে থাকতে হচ্ছে অর্ধাহারে, অনাহারে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও তাদের সাহায্যার্থে কাজ করছে। তেমনই একটি জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রীড়া সমিতি (এনএএসপিডি)।
গেল কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তারা সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত, দিনমজুর ও প্রতিবন্ধীদের হাতে তুলে দিচ্ছে খাদ্যপণ্য, সাবান, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
এ বিষয়ে জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রীড়া সমিতির মহাসচিব ডা. সেলিনা আখতার বলেন, ‘আসলে করোনার সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের বিকল্প নেই। আর এই লকডাউনে একটা শ্রেণির মানুষ বিপাকে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে প্রতিবন্ধী মানুষেরা। এমন সময়ে দিনমজুর, নিম্নবৃত্ত ও প্রতিবন্ধীদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি সাহায্য-সহযোগিতা করার। হাজারীবাগ, রায়েরবাজার, কাওরানবাজার, বিজয়স্মরণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিতরণ করছি।
‘পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ক্রীড়া সমিতির পক্ষ থেকে মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করছি যাতে সরকারি বরাদ্ধের একটা অংশ প্রতিবন্ধীদের দেওয়া হয়। কারণ, প্রতিটি উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের তালিকা করা আছে। তাদের সাহায্য দেওয়াটা তুলনামূলক সহজ। আর বিভিন্ন প্রতিবন্ধীরা করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে বুদ্ধি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা। তারা লকডাউনে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। ঘর থেকে বের হতে পারে না। মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে পারে না। তাই আমাদের তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। প্রতিবন্ধীদের জানানো উচিত কিভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। কিভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হয়। প্রতিবন্ধীদের মা-বাবাদের বোঝানো উচিত কিভাবে এই সময়ে তারা তাদের সন্তানের যত্ন নিবে’। যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রীড়া সমিতির সভাপতি এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন) বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ অনুযায়ী যথাসাধ্য চেষ্টা করছি খেটে-খাওয়া মানুষ ও প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা প্রতিদিনই চেষ্টা করছি কাউকে না কাউকে সহযোগিতা করার। আমাদের এনএএসপিডির তত্ত্বাবধানে যেসব প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোররা রয়েছে তাদের সহযোগিতা করছি। ব্লাইন্ড ফুটবল দলকে সহযোগিতা করছি। আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হলেও এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত তারা। তাদের নিয়ে কাজ করেছে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংগঠন। তাদের মধ্যে অন্যতম জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রীড়া সমিতি (এনএএসপিডি)। যারা ২০০০ সাল থেকে সব ধরণের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে। বছরে বেশ কয়েকবার তাদের নিয়ে ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন করছে। নানারকম ক্রীড়া আয়োজন ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে এবং তাদেরকে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে।