অর্থনৈতিক ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতিতে টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে থমকে থাকার পর পণ্য ডেলিভারি বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দর ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। গত বৃহস্পতিবার থেকে এর আগের ৪৮ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয়েছে ৮ হাজার ৬৮২টি ইউ’স (২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার) পণ্যবাহী কন্টেইনার। পণ্য ডেলিভারি বাড়ায় বন্দর এলাকায় কন্টেইনারবাহী প্রাইম মুভার, ট্রেইলার, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক চলাচলও বেড়েছে। এর আগে ব্যবসায়ীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকার স্টোর রেন্ট চার্জ মওকুফ করা হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ের মতোই বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি হচ্ছে ৪৫০০ টি ইউস (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) পণ্যবাহী কন্টেইনার, হ্যান্ডেলিং হচ্ছে ছয় হাজারেরও বেশি টিউস কন্টেইনার। আর বন্দরের এই স্বাভাবিক রূপে ফেরাতে ব্যবসায়ীদেরকে বন্দও কর্তৃপক্ষ স্টোর চার্জ মওকুফ করেছে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা। নিয়েছে আরো অনেক পদক্ষেপ।
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, প্রায় সব ধরনের আমদানি পণ্য স্ক্যানিং করে ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আমদানি পণ্য ভর্তি ২ হাজার ৫৭০ বক্সে ৩ হাজার ৯৩৫ টিইইউ’স কনটেইনার জাহাজ থেকে জেটি বা টার্মিনালে নামানো হয়েছে। রফতানি পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার মিলে জাহাজে তোলা হয়েছে ২ হাজার ৯৩৯ কনটেইনার। বন্দরের জিসিবি, এনসিটি, সিসিটিতে মোট ১২টি কনটেইনার জাহাজে হ্যান্ডলিং হচ্ছে। এর বাইরে বহি:নোঙ্গরে অপেক্ষমাণ আছে আরও ২৮টি কনটেইনার জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নানা উদ্যোগ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় কনটেইনার ডেলিভারি ক্রমে বাড়ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি নিলে আমদানিকারকরা শতভাগ স্টোর রেন্ট ছাড় পাবেন।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন চার হাজার থেকে চার হাজার ৫০০ কন্টেইনার ডেলিভারি হতো। বর্তমানে সেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। এই অবস্থা ধরে রাখতে আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বন্দর সচিব বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হওয়ায় ইয়ার্ডে আটকে থাকা সকল ধরনের পণ্যবাহী কন্টেইনারের শতভাগ স্টোর রেন্ট আগামী ৪ মে পর্যন্ত মওকুফ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি সকল ধরনের পণ্য বেসরকারি আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল ধরনের আমদানিকৃত কন্টেইনারের স্টোর রেন্ট মওকুফের সময় বৃদ্ধির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস করে বন্দরের সক্ষমতা ও গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে সকল আমদানিকারক ব্যবসায়ীদেরও তিনি আহ্বান জানান।
বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) মালিকদের সংগঠন বিকডার সচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, সকল পণ্য বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আইসিডিতে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়ার পর এই পর্যন্ত আট হাজার ৫০০ কন্টেইনার স্থানান্তর হয়েছে। এখনো ১৯টি আইসিডিতে ২১ হাজার কন্টেইনার রাখার স্থান খালি আছে। এখন বন্দরে কন্টেইনার জট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।