বিনোদন প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ:হাসপাতালের বেডে শুয়ে প্রিয় মানুষদের খুঁজে চলেছেন কিংবদন্তি সুরকার আলাউদ্দিন আলী। প্রায় চার মাস পার হয়ে গেলো ঘরে ফেরা হয়নি তার। হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে রোগের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। সহজ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার তাড়নায় চিকিৎসার মধ্যেই কাটছে তার একেকটা দিন।
আলাউদ্দিন আলীর পাশাপাশি পথ চলেছেন যারা তাদের ভীষণ রকম মিস করছেন তিনি। আগের চেয়ে এখন কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রিয় এই সুরকার। অনেক কিছুই মনে করতে পারছেন। অনেককে দেখতেও ইচ্ছে করছে তার।
আলাউদ্দিন আলীর সঙ্গে অনেক দিন ধরেই থাকেন তরুণ কণ্ঠশিল্পী মোমিন বিশ্বাস। তাদের সম্পর্কটা গুরু শিষ্যের। রোববার রাতে ওস্তাদকে হাসপাতাল থেকে দেখে আসার পর এক আবেগ ঘন স্ট্যাটাস লিখেছেন তিনি। বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে এখানে।
মোমিন লিখেছেন, ‘অন্যান্য দিন হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় এতটা কাঁদিনি! আজকে সাভার থেকে মিরপুর পর্যন্ত পুরো রাস্তা সানগ্লাসের আড়ালে চোখের পানি গড়িয়ে ঘামের সাথে কখন মিশে গেছে টের পাইনি! গত ১১৬ দিন যাবৎ ওস্তাদকে নিয়ে কিছু লিখতে গিয়েও পারিনি!
আজকে অনেক কথা বলেছেন তিনি, যখন আমাকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করছিলেন কিশোর (এন্ড্রু কিশোর) কই? বাবু (ফুয়াদ নাসের) কই? শুভ (আলী আকরাম) কই?,রফিক ভাই (মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান) কেমন আছে? তখন কিছুটা আনন্দেই চোখটা ভিজে আসছিল! কারণ উনার এভাবে জিজ্ঞেস করাটা খুব ভালো জানি আমি!
১১৬ দিন আগে যেভাবে সবার খোঁজ নিতেন আজকে ঠিক সেই অনুভূতি পেয়েছি! গত কয়েকদিনের তুলনায় আজকে খুব স্পষ্ট করে সবকিছু জিজ্ঞেস করছিলেন! ফেরার পথে মিমি বুবুর (আলাউদ্দিন আলীর বর্তমান স্ত্রী) নম্বর থেকে ফোন পেয়ে ভাবলাম মিমি বুবুই হয়ত ফোন দিয়েছে! রিসিভ করতেই স্যারের চিরচেনা কণ্ঠ- কই তুই? গাড়িতে উঠেছিস? আনন্দে আর কান্না থামাতে পারিনি!
গুণে গুণে ১১৬ দিন পর আজকে সেই আলাউদ্দিন আলীকে পেয়েছি। ১১৬ দিন আগে যে আলাউদ্দিন আলী দিনের ভেতর অসংখ্যবার ফোন দিয়ে কখন কোথায় আছি, কি করছি, খেয়েছি কি না খোঁজ নিতেন!
স্যার… গত ১১৬ দিনে আর কেউ খোঁজ নেয়নি কখন কোথায় আছি খেয়েছি কি না, রেওয়াজ করেছি কি না। নিজের ভেতরকার কান্না থামাতে পারি না বলে হাসপাতালে এখন আর বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। রাতের বেলা এখন আর ফোন পাই না যাবতীয় গল্প শোনার জন্য, সারাদিনে অসংখ্যবার গত ১১৬ দিন যাবৎ এখন আর ফোন আসে না!’
সোমবার সকালে মোমিন বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন স্যার। তার বাম হাত ও বাম পা প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছিলো। এখন বাম পা ভালো হওয়ার পথে। একটু একটু হাঁটতে পারছেন তিনি। বাম হাতটা এখনো দুর্বল হয়ে আছে। নিয়মিত থেরাপি দেওয়া হচ্ছে।’
মোমিন বিশ্বাস জানালেন, এরই মধ্যে এ্যন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, ফুয়াদ নাসের বাবু, আলী আকরাম শুভ ,মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানসহ আরও অনেকেই একাধিকবার দেখতে এসেছেন আলাউদ্দিন আলীকে। নিয়মিত খোঁজ রাখছেন তারা। দেখতে এসেছেন তাকে চিত্রনায়ক ওমর সানীও।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ২২ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হসপিটালে আইসিইউতে ভর্তি হন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী। এরপর তার অবস্থার অবনতি হলে, টানা ২৬ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আলাউদ্দিন আলীকে বিশেষ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এখন আগের চেয়ে এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন আলাউদ্দিন আলী। তবে তার শরীরের বাম অংশে সমস্যা থাকায়, ফিজিওথেরাপি নিতে তাকে সাভারের সিআরপি হাসপাতালে নেয়া হয়। নিয়মিত থেরাপি চলছে তার।