অনলাইন ডেস্ক: করোনার বিস্তার ঠেকাতে আরোপিত লকডাউনের সময় ভারতে বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে। লকডাউনে কর্মহীন হওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে অনেক পরিবার। তাই অর্থনৈতিক বোঝা লাঘবের জন্য এসব পরিবারের কর্তারা শিশুকন্যাদের বিয়ে দিচ্ছেন। চাইলন্ডলাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের বরাত দিয়ে আজ শনিবার স্ট্রেইটস টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।
কর্নাটকের মহিসাসুর জেলা শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা ড. এস দিবাকর জানান, মধ্যমার্চ ও জুলাইয়ে তার জেলায় ১২৩টি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। অথচ গতবছর একই সময় এই সংখ্যা ছিল ৭৫। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ ১১০টি বিয়ে বন্ধ করেছে।
২৫ মার্চ লকডাউনে গিয়েছিল ভারত। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে লকডাউন শিথিল শুরু হয়। গত মার্চ থেকে ভারতের স্কুলগুলো বন্ধ। অনেক দরিদ্র পরিবার স্কুল থেকে দেওয়া সরকারি সাহায্যের জন্য মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেন। স্কুল বন্ধ থাকায় সেই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এ কারণে অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পরিবারগুলো তাদের ছেলেদের কাজে পাঠাচ্ছে এবং মেয়েদের জোর করে বিয়ে দিচ্ছে।
ড. দিবাকর বলেন, ‘লকডাউনের সময় অনেক পরিবার তাদের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের ধারণা ছিল, কেবল জরুরি সেবাবিভাগগুলো ছাড়া সব সরকারি দপ্তর বন্ধ থাকবে। এখন পরিবারগুলো ধরা পড়ার আশঙ্কায় খুব ভোরে বা মধ্যরাতে মন্দিরে বিয়ের কাজ সেরে ফেলছে।’
তামিলনাড়ুর তিরুভান্নামালাই জেলায়ও বাল্যবিয়ের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। জুনে এই জেলায় ৩৫টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এপ্রিল ও জুলাইয়ের মধ্যে বাল্যবিয়ে হয়েছে ৮৭টি। অথচ গত বছর একই সময় এই সংখ্যা ছিল ৬৭।
চাইলন্ডলাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১৪ হাজার ৭৭৫টি বাল্যবিয়ে ঠেকিয়েছেন কর্মকর্তারা। অথচ গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১৮১টি। লকডাউনের সময় বাদে অন্য মাসগুলোতে বাল্যবিয়ে ঠেকানোর হার চলতি বছর ১৭ থেকে ২১ শতাংশ বেড়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অনন্য চক্রবর্তী বলেন, ‘স্কুল থেকে ঝরে পড়া প্রত্যেকটি মেয়ে সম্ভাব্য শিশুবধূ।’
তিনি জানান, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র ও কর্মহীনতা এই মেয়েদের আরও অরক্ষিত করছে।
ভারতে প্রতি তিনটি কন্যা শিশুর মধ্যে এক জন বাল্যবিয়ে শিকার। ২০১৯ সালে ইউনিসেফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছরের আগেই ভারতে ১০ কোটি ২০ লাখ থেকে ২২ কোটি ৩০ লাখ শিশুর বিয়ে হয়ে যায়।