নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চাই এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তা করা।
মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বাসস।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চায় উল্লেখ করে স্টিফেন ই বিগান বলেন, ‘আমরা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১১ লাখেরও বেশি লোক বাংলাদেশে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা। সমস্যাটি মিয়ানমার তৈরি করেছে এবং আমরা তাদের সঙ্গে সংলাপ করছি- তাদের উচিত তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া।’
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি সামাজিক সমস্যা এবং মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত নাগরিক কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরগুলোয় বাস করছে। তিনি বলেন, ‘কিছু মহল অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত হতে তাদের ভুলপথে চালিত করতে পারে। সুতরাং আমরা অবিলম্বে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন করাতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে আত্মগোপনে থাকা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন।
এ বিষয়ে স্টিফেন ই বিগান জানান, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সেবা আবার চালু করা হবে।
বুধবার বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে চায়। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার : মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কোভিড-১৯ বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র টিকা উৎপাদন করলে তার বিতরণে বাংলাদেশের প্রাপ্যতার বিষয় বিবেচনা করা হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন বিষয়ে একত্রে কাজ অব্যাহত রাখবে দুই দেশ।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। স্টিফেন বিগান বলেন, বাংলাদেশে এটা তার প্রথম সফর। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ নিবিড়ভাবে কাজ করে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টিমের সঙ্গে আমি বুধবার রাতে বৈঠক করেছি। ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হল বাংলাদেশ।
বিগান বলেন, কোভিড-১৯বিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একত্রে কাজ করবে। টিকা উদ্ভাবন হলে তার বিতরণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরামে যোগ দেবে।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরে নতুন কনসুলেট চালু করবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য এই কনসুলেট কাজ করবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসন করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের অনুরোধে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি আইনি বিষয়। আইনগত পর্যালোচনা করার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।
তবে তিনি এও বলেন যে, এই বিষয়টি তার মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তাই এটা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিগান।
বেইগানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ সময় দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এসবের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনস্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা, কৃষি ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য সচিব, পিপিপি’র সিইওসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন। ভারত সফর শেষে দু’দিনের সফরে বুধবার বিগান ঢাকায় আসেন। মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশংসা করেন।
১০০ ভেন্টিলেটর দেবে আমেরিকা : স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেছেন, আমেরিকা বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র। দেশের যে কোনো দুর্যোগে আমেরিকা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এবারের কোভিড মোকাবেলা করতেও আমেরিকা বাংলাদেশের সার্বিকভাবে নানা খাতে সহায়তা করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আমেরিকা বাংলাদেশের কোভিডসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দিতে নতুন ও অত্যাধুনিক অন্তত একশটি ভেন্টিলেটর দেবে।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভ্যান্টিলেটর মেশিন ও গ্যাস অ্যানালাইজার মেশিন হস্তান্তর সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলমসহ অন্য কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সেই দেশের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ডেপুটি সেক্রেটারি মি. স্টেফেন এডওয়ার্ড বিগান, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএসএ অ্যাম্বাসেডর মি. আর্ল আর মিলারসহ অন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আগামী দিনে ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু হলে আমেরিকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন ডেপুটি সেক্রেটারি বিগান এবং বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুত ভ্যাকসিন পেতে আমেরিকা সরকার সব ধরনের সয়াহতা করবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দুটি অতি উন্নত গ্যাস অ্যানালাইজার মেশিন হস্তান্তর করেন ইউএসএ ডেপুটি সেক্রেটারি স্টেফেন এডওয়ার্ড বিগান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএসএ অ্যাম্বাসেডর মি. আর্ল আর মিলার।
ধর্ষণ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিন- বিপিএটিসি’র প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : ধর্ষণ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এই অপরাধের ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা (ধর্ষণ) রোধ করার ব্যাপক ব্যবস্থা নিতে হবে। সব থেকে বড় কথা- মানুষের মাঝেও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার।
সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইদানীং ধর্ষণটা ব্যাপকভাবে হচ্ছে এবং প্রচারও হচ্ছে। এটার যত বেশি প্রচার হয়, প্রাদুর্ভাবটাও তত বাড়ে।’
বৃহস্পতিবার সকালে সাভারে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) ৭০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী এবং সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানস্থলসহ ৭টি বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আপনারাই আগামী দিনের কর্ণধার হবেন। আপনারাই দেশটাকে পরিচালনা করে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আজকের যারা নতুন প্রজন্ম, তারই একচল্লিশের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনারা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কারণ আমি জানি যে, বিচার না পেলে কী কষ্ট। আমার বাবা-মা, ভাই, ভ্রাতৃবধূ-তাদেরকে যখন হত্যা করা হয়, খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল। আমার বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না। আমি কেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের পরিবারের কারোরই বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা, ভাই মারা গেছে, আমি একটা মামলাও করতে পারিনি। আমার সেই অধিকারটাও ছিল না। এই সংস্কৃতি বাংলাদেশে যেন আর না থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে সংস্কারের মাধ্যমে স্বাধীন দেশের উপযোগী সিভিল সার্ভিস গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এ সময় সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার একটি ভাষণেরও উদ্ধৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা তার ভাষণে বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনা দেয় ওই গরিব কৃষক, আপনার মাইনা দেয় ওই গরিব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়, ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন, ওরাই মালিক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা নবীন কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাদের কিন্তু ওই কথাটাই মনে রাখতে হবে যে, এই দেশের গরিব মানুষ যারা বা এখনও তৃণমূলে যারা পড়ে রয়েছেন, তারাই এদেশের মালিক। আর তাদের ঘর থেকেই লেখাপড়া শিখে আজকে উঠে এসেছেন। কাজেই, সেদিকে লক্ষ রেখে তাদের সেবা করাটাই হবে সব থেকে বড় দায়িত্ব।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে জাতির পিতা তার দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচির অংশ হিসেবে সব মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে প্রত্যেক জেলার জন্য ‘জেলা গভর্নর’ নিযুক্ত করেন। কারণ, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণই ছিল জাতির পিতার মূল লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, কোনো শিশুই পথশিশু থাকবে না, প্রত্যেক শিশুরই একটা ঠিকানা হবে এবং লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান করে জীবনে যাতে দাঁড়াতে পারে, তার ব্যবস্থা আমাদের করে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই চর কুকরি-মুকরি থেকে শুরু করে সারা দেশ যেন ডিজিটাল সংযোগের আওতায় আসতে পারে, সেই উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। দেশ ডিজিটাল হয়েছে বলেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে দূর থেকে আপনাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কথা বলতে পারছি।’
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পরপরই আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতেই হবে। যে কারণে দেশে কোনো খাদ্য সংকট হয়নি। অর্থনীতির চাকা যেন সচল থাকে, সে ব্যবস্থা যেমন আমাদের করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে দেশটা যেন এগিয়ে যেতে পারে, সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিপিএটিসি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ভৌত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিপিএটিসি’র সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০তলাবিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন’ এর নকশা ইতোমধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, আমাদের এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটা যেন একদিকে যেমন দৃষ্টিনন্দন হয় এবং সেখানের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাটাও যেন বিশ্বমানের হয়। আর এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা সমগ্র বিশ্বে যেন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।’
সিভিল প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবেন, যেন দেশ আর কোনোদিন পিছিয়ে না যায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি মানুষের জীবনেই একটা দিক দর্শন থাকতে হয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হয়। লক্ষ্যবিহীন জাতি যেমন এগোতে পারে না, তেমনই দিকহারা জাতি কোনো ঠিকানা খুঁজে পায় না। কাজেই, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সব পরিকল্পনা দিয়ে গেলাম। যাকে আপনারাই সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। বিপিএটিসি’র রেক্টর মো. রাকিব হোসেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৭০তম বুনিয়াদি কোর্সের ফলাফল হস্তান্তর করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে সনদ বিতরণ করেন।
এবারের ৬ মাসের কোর্সটির শেষ এক মাস করোনার কারণে অনলাইনে সমাপ্ত করা হয়। যেখানে ১৬১ জন নারীসহ ৬৬৩ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৫০ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী সেন্টার অব এক্সিলেন্স সনদপ্রাপ্ত হন।