নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনলাইন শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি সময়ের দাবি। অনলাইনে শুধু লেকচার প্রদান করলেই চলবে না। বরং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি তাদের অর্জন যাচাইয়ের যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় অনলাইন শিক্ষা কার্যকর হবে না।
আজ সোমবার (২৬ জুলাই) ভার্চুয়ালি আয়োজিত বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য ওপেন রিসোর্স তৈরি, ব্যবহার এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম-বিষয়ক এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ইউজিসি ও কানাডার ভ্যানকুভারস্থ কমনওয়েলথ এডুকেশনাল মিডিয়া সেন্টার ফর এশিয়ার (সেমকা) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচ দিনের এ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান, সেমকার পরিচালক প্রফেসর ড. মাধু পারহাড় ও সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার (এডুকেশন) ড. মানস রঞ্জন পানিগ্রাহী। ইউজিসির আইএমসিটি বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া কর্মশালায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে কার্যকর করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দেশের সব স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি শক্তিশালী ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সেবা নিশ্চিত করতে না পারলে সকল শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হবে না। সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হলেও অনেক স্থানেই ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক অনেক দুর্বল। তাছাড়া ডিভাইস ক্রয় করার সামর্থ্যও অনেক শিক্ষার্থীর নেই।
এক্ষেত্রে ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ক্রয়ে ঋণ প্রদান এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সেবাদানের ব্যবস্থা করেছে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ আরও বলেন, অনলাইন ও ব্লেন্ডেড লার্নিং সম্পর্কে শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না গেলে এই শিক্ষা কার্যক্রম কার্যকর করা যাবে না। করোনা-পরবর্তী সময়েও অনলাইন শিক্ষা ও ব্লেন্ডেড লার্নিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এ ব্যবস্থাকে টেকসই করতে ইউজিসি ব্লেন্ডেড লার্নিং পলিসি তৈরিতে কাজ করছে।
ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, করোনা মহামারি পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে অনলাইন শিক্ষা ও ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেম কার্যকর করা গেলে এ চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণ আমাদের জন্য সহজ হবে।
প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের তার বক্তব্যে বলেন, শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রমের মেরুদণ্ড। শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না গেলে গুণগত শিক্ষা কোনোভাবেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। পাঁচ দিনের এই কর্মশালায় অনলাইন শিক্ষা, ব্লেন্ডেড লার্নিং, অনলাইন অ্যাসেসমেন্ট কৌশল, অনলাইন কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্টসহ ওপেন রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে, যা বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষকদের ধারণাকে আরও শাণিত করবে।
ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অনলাইন শিক্ষা ও ব্লেন্ডেড লার্নিংয়ের ধারণা নতুন। এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে পলিসি প্রণয়নসহ শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ইউজিসি এক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করছে।
সেমকার পরিচালক প্রফেসর ড. মাধু পারহাড় তার বক্তব্যে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে শিক্ষা সংক্রান্ত কন্টেন্টসমূহ সবার জন্য উন্মুক্ত করার ওপর জোর দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তৈরি করা লেকচার নোট, টেক্সট, অ্যাসাইনমেন্ট পেপার, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, গবেষণাপত্র ইত্যাদি উন্মুক্ত থাকলে একই বিষয়ের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে তা ব্যবহার করতে পারেন। এতে শিক্ষার বিস্তার সহজ হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, পাঁচ দিনের এই কর্মশালা শিক্ষকদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ওপেন রিসোর্স পলিসি তৈরিতে উৎসাহিত করবে।
কর্মশালায় দেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ জন শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ট্রেজারার ও স্কুল অব বিজনেসের ডিন অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল আজাদ কর্মশালার প্রথম দিনে সেশন পরিচালনা করেন। উল্লেখ্য, একই বিষয়ে খুব শিগগিরই আরও একটি কর্মশালা আয়োজন করা হবে, যেখানে আরও ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ জন শিক্ষক অংশ নেবেন।