২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী তালাকের খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তিনি বাজেট পেশ করে এ তথ্য জানান। এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, তালাকের রেজিস্ট্রেশন স্ট্যাম্প ছিল ৫০০ টাকা। নতুন ঘোষিত বাজেটে এই অর্থ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০০০ টাকা।
রাজধানীতে তালাকের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭ হাজার ২৪৫টি ডিভোর্স নোটিশ পাঠানো হয়। এগুলোর মধ্যে ৫ হাজার ১৮৩টি স্ত্রীরা এবং ২ হাজার ৬২টি স্বামীরা পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৫২০, ফেব্রুয়ারিতে ৫২৫, মার্চে ৬৫৫, এপ্রিলে ৬০২, মে ৩৬২, জুন ৮৬৬, জুলাই ২৯৪, আগস্ট ৭১২, সেপ্টেম্বর ৮১৪, অক্টোবর ৫৬১, নভেম্বর ৭৫৫ এবং ডিসেম্বরে ৫৮০টি আবেদন করা হয়েছে। স্ত্রী বা নারীরা করেছেন মোট ৫ হাজার ১৮৩টি আবেদন। স্বামীরা করেছেন মোট ২ হাজার ৬৩টি আবেদন। আর মোট আবেদনের সবচেয়ে বেশি আবেদন করা হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে ৮১৪টি। সবচেয়ে কম আবেদন করা হয় জুলাই মাসে ২৯৪টি। এর অধিকাংশ আবেদনই নারীদের বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী দিনে গড়ে ৩৭টি তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গড়ে ৭০ শতাংশ আবেদন করছেন নারীরা। তালাকের আবেদনে সমঝোতা হচ্ছে গড়ে ৫ শতাংশেরও কম। যতোগুলো তালাকের ঘটনা ঘটছে তার কারণগুলো প্রায় একই। যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মাদকাসক্তি, স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, পরনারীর সঙ্গে সম্পর্ক, পুরুষত্বহীনতাসহ বিভিন্ন কারণ। অন্যদিকে বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, স্বামীর অবাধ্য হওয়া, ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, সন্তান না হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন স্বামীরা।
বিগত ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে তালাকের ঘটনা ১৭ শতাংশ বেড়েছে। পরবর্তীতে প্রতিবছর এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। তালাকের এই চিত্রের বিশ্লেষণ করে দেখা যায় স্বামীর চেয়ে স্ত্রীরাই বেশি ঘর-সংসার ভাঙার পক্ষে। ভেঙে যাচ্ছে সংসার ও পারিবারিক বন্ধন। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের বরাবর তালাকের আবেদনের সংখ্যাও বাড়ছে। বছরে যে পরিমাণ তালাকের আবেদন করা হয় তার গড়ে ৭০ শতাংশই স্ত্রীদের। স্বামীদের আবেদন কম।
সমাজ বিজ্ঞানী ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা, উচ্চাবিলাসী মনোভাবের করণে এখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পেছনে কাজ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে দুইজনের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্ম নেয়। এতে করে তালাকের মতো ঘটনা ঘটে।