নানা শঙ্কা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ঢাকার মঞ্চে গাইলেন কবীর সুমন। শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মঞ্চে ওঠেন কবীর সুমন। গান শুরু করার আগে ছোট্ট বক্তব্য দেন তিনি। সুমন বলেন, ‘এখন গিটার বাজাতে পারি না, তবে গাইতে পারি। এটাই আনন্দ।’
কবীর সুমন জানালেন, শরীরে বাসা বাঁধা দুটো রোগের কারণে এখন আর ঠিক মতো উঠে দাঁড়াতে পারেন না তিনি। চলাচলের জন্য বসতে হয় হুইল চেয়ারে। সমস্যা হয় কোথাও একটানা বসে থাকলেও। এসব সমস্যার কথা জানিয়ে সুমন বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় শুয়ে শুয়ে গান গাই!’
এদিকে আয়োজকদের অব্যাবস্থাপনা আর অডিটোরিয়াম জটিলতা নিয়ে কোনো কথা বলেননি কবীর সুমন। কোনো আক্ষেপ প্রকাশ না করেই আগত দর্শকদের শোনালেন তার শ্রোতা নন্দিত কয়েকটি গান। গাইলেন ‘একেকটা দিন’, ‘পুরানো সেই দিনের কথা’, ‘হাল ছেড়োনা বন্ধু’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, যদি ভাবো কিনছো আমায়’।
এদিকে অনুষ্ঠান শুরুর মাত্র ৩০ মিনিট পরেই আয়োজকেরা অডিটরিয়াম থেকে বের করে দেন গণমাধ্যমকর্মীদের! এতে প্রচণ্ড বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় আয়োজকদের প্রতি। টিকিট অব্যবস্থাপনা, অডিটোরিয়াম জটিলতা এবং সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে আগে থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান পিপহোল। যার শেষ পেরেকটা পড়লো সুমনের প্রথম দিনের আয়োজনের আধা ঘণ্টার মধ্যে সংবাদকর্মীদের বের করে দেওয়ার ঘটনায়।
এই বিষয়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানোনো হয়, সাংবাদিকদের আধাঘণ্টা সুযোগ দেওয়া হয়েছে সংবাদ সংগ্রহ ও ভিডিও ফুটেজের জন্য। তারা তো টিকিট কাটা দর্শক নন। ফলে তাদের উপস্থিতির কারণে টিকিট-কাটা দর্শকদের সংগীত উপভোগে ব্যাঘাত ঘটবে!
জাতীয় জাদুঘর নয়, কবীর সুমন গাইবেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে
এর আগে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে ১৫-১৮ অক্টোবর পর্যন্ত কবীর সুমনের গানের তিনটি অনুষ্ঠানের সূচি ঘোষণা করে আয়োজক প্রতিষ্ঠান পিপহোলের কর্মকর্তারা। জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ১৫ অক্টোবর আধুনিক বাংলা গান, ১৮ অক্টোবর বাংলা খেয়াল ও ২১ অক্টোবর আধুনিক বাংলা গান পরিবেশনের কথা ছিল। সে অনুযায়ী অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি’র কাছে। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। পরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে গান করার অনুমতি পায় আয়োজকরা।
দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষমাণ দর্শক-শ্রোতার উদ্দেশে সুমন বলেন, ‘আপনারা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছেন, আমরা গান বাজনাটা শুরু করে দেই। আগে যতবার এসেছি আমি একাই এসেছিলাম, এখন আমি বুড়ো হয়েছি, উঠতে অসুবিধা হয়, বসতে অসুবিধা হয়, আমার সাহায্য দরকার হয়, হতেই পারে আমার বয়স হয়েছে।’
নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে সুমন বলেন, ‘আমার একটা অসুখ হয়েছে, এটা স্নায়ুর অসুখ, এই অসুখের কারণে আমি যেমন হাতে লিখতে পারি না তেমনই গিটারও বাজাতে পারি না। আর কোনোদিন পারবো না। একটানা বসে থাকলেও সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় শুয়ে শুয়ে গান গাই! তবে এজন্য আমার আলাদা কোনো দুঃখ নেই। গুরুদের কৃপায় আমি এখনও একটু একটু গান গাইতে পারি, এটাই আনন্দ। ফলে আমার সঙ্গে বাজানোর জন্য বন্ধুদের দরকার হয়।’
এরপর তার সফরসঙ্গী তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর কথা বলতে বলতে ‘একেকটা দিন’ শিরোনামের গান গাইতে শুরু করেন সুমন। তখনও হলরুম জুড়ে বেশ নীরবতা। গানটি শেষ হতেই কবীর সুমন কণ্ঠে তুললেন ‘সূর্যদয়ের আগে’ শিরোনামের আরেকটি গান। এরই মাঝে দর্শকদের করতালিতে মুখর হলরুম।
এরপর গান থামিয়ে সুমন দর্শকদের উদ্দেশে সুমন আবার বললেন, ‘আপনারা এতো শান্ত’। এরপর গাওয়া শুরু করেন ‘জাগে জাগে রাত’ শিরোনামের গান। গানটি শেষ হতেই মাগরিবের আজানের সময় হাত নেড়ে সবাইকে নীরব থাকার আহবান জানান শিল্পী।
এরপরেই আবারো নাটকীয়তা। আয়োজনের আধা ঘণ্টার মধ্যে অনুষ্ঠানস্থল থেকে আয়োজকরা বের করে দেয় গণমাধ্যমকর্মীদের! আয়োজকদের অসৌজন্য আচরণের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই বিষয়ে আয়োজকদের বক্তব্য এমন, সাংবাদিকদের আধাঘণ্টা সুযোগ দেওয়া হলো সংবাদ সংগ্রহ ও ভিডিও ফুটেজের জন্য। তারা তো টিকিট কাটা দর্শক নন। ফলে তাদের উপস্থিতির কারণে টিকিট-কাটা দর্শকদের সংগীত উপভোগে ব্যাঘাত ঘটবে!
কবীর সুমন এই আয়োজন চলবে আরো দুদিন ১৮ ও ২১ অক্টোবর। এই দু্ই দিনে সুমন গাইবেন খেয়াল ও আধুনিক গান।