চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে পাঠানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেই তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে বলে গুঞ্জন চলছে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়সহ সর্বত্র।
এদিকে, এ ঘটনার একদিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে ‘জনস্বার্থে’ অবসরে পাঠানোর পর এই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে প্রশাসনে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ের প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা গুঞ্জন ছিল এ নিয়ে। এরপর কাকে অবসরে পাঠানো হচ্ছে এবং হঠাৎ করে কেনই বা সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এই প্রশ্ন ছিল অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, আরও প্রায় পাঁচ থেকে ছয় জন সচিবসহ সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেককেই জনস্বার্থে অবসরে পাঠানো হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, সরকারবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছিল বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে উল্লেখ করেন।
গোয়েন্দা সংস্থার নানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজে এখনো তৎপর রয়েছেন বলেও জানান কেউ কেউ।
তবে, সুনির্দিষ্ট কী কারণে সরকার একজন সচিব কিংবা পুলিশ সুপারসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন- এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা কোনভাবেই অবহিত নয় বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্যও নেই বলে জানান তারা।
উল্লেখ্য, চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। রোববার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশে সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে মকবুল হোসেনকে অবসর প্রদান করা হলো। তবে, কী কারণে তথ্যসচিবকে অবসরে পাঠানো হলো, এ ব্যাপারে কোন তথ্য উল্লেখ করা হয়নি প্রজ্ঞাপনে।
এমন ঘটনার সম্পর্কে তিনি কখনোই প্রস্তুত ছিলেন না জানিয়ে সোমবার গণমাধ্যমকে মকবুল হোসেন বলেছেন, কোন অপরাধে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো সেটা জানেন না তিনি। নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে তিনি কখনোই আপস করেননি বলেও উল্লেখ করেন সেদিন।
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ মকবুল হোসেন পদোন্নতি পেয়ে গত বছরের ৩১ মে সচিব হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছিলেন।
এদিকে, মঙ্গলবার পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে ‘জনস্বার্থে’ অবসরে পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত তিনটি আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এরা হচ্ছেন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির দুজনসহ তিন এসপি। এরপর থেকেই প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কর্মকর্তাই আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। কোন কারণ ছাড়াই নিজেদের মধ্যে আলাপ করছেন যেকোনো মুহূর্তে যে কারো চাকরি চলে যেতে পারে। এ নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেও ভয়ে ভয়ে নানা বিষয় জানতে চেয়েছেন দিনভর।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে। তবে যে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে।