ফসলের মাঠেই ঝরে পড়ছে আমনের পাকা ধান। ব্যস্ততার কারণে ধান কাটা হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যেই বাসচাপায় নিহত হন জহিরুল ইসলাম। ছেলেকে হারিয়ে ফসলের দিকে তাকিয়ে কাঁদতেন মা। মায়ের কান্না মুছতে এগিয়ে যান ছেলের বন্ধুরা। ধান কেটে ঘরে তুলে দেন তারা। ফলে কষ্টের মাঝেও পঞ্চাশোর্ধ্ব জোছনা বেগমের মনে কিছুটা স্বস্তি ফেরে।
জোছনার বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পুটিয়ালিচর গ্রামে। চলতি বছরের ১ আগস্ট বাসচাপায় মারা যান মোটরসাইকেল আরোহী ২৫ বছর বয়সী জহিরুল ইসলাম। একমাত্র অবলম্বন ছেলে জহিরুলকে হারিয়ে একা হয়ে যান জোছনা। তবে ছেলেকে হারানোর পর তার অভাব কিছুটা হলেও পূরণের চেষ্টা করছেন জহিরুলের বন্ধুরা। নানা প্রয়োজনে দাঁড়াচ্ছেন পাশে। প্রায়ই বাড়িতে এসে খোঁজখবর নেন বন্ধুর মায়ের।
এমনকি আমনের ধানও লাগিয়ে দিয়েছেন বন্ধুরা। সেই ধান এখন কেটেও দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দাপুনিয়া-ঘাগড়া হেল্পলাইন’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জহিরুল। এছাড়া দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সংসারের খরচ চালাতেন তিনি।
সংগঠনের পরিচালক মো. রাকিব হাসান বলেন, ছেলে মারা যাওয়ার পর একা থাকেন জহিরুলের মা। মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে। যে কারণে এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বন্ধুরা জোছনা বেগমের খোঁজখবর রাখেন। জহিরুলের মায়ের নিজের জমি নেই। বাড়ির পাশে লিজ নেয়া চার কাঠা জমিতে বন্ধুরা মিলে ধান লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এখন সেই ধান কেটে দিলেন।
তিনি বলেন, গ্রামের খালে সেতু ছিল না। জহিরুল উদ্যোগী হয়ে প্রায় ৪০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকো করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি রক্তও দিতেন। গেল বন্যায় সিলেটের সুনামগঞ্জে ত্রাণও নিয়ে যান জহিরুল।
জোছনা বেগম বলেন, আমার ছেলে চলে যাওয়ার পর থেকেই আমার জীবনে কোনো সুখ-আহ্লাদ নেই। বাড়িতে মেয়েও থাকে না। ছেলের বন্ধুরা আমার বাড়ি এলে খুব ভালো লাগে। সময়ে অসময়ে তারা এসে আমার ভালো মন্দ জানতে চান। এবার ধান কেটেও উপকার করে দিয়েছেন।