আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যদিয়ে দলের হাল ধরতে আসবে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি। আর এরইমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তবে এই সম্মেলনের চলমান কার্যক্রমে মধ্যে সব কিছু ছাড়িয়ে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদ।
আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে রাজনীতির মাঠে চলছে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক? কাদেরই হ্যাটট্রিক করছেন, নাকি নতুন মুখ আসছে আওয়ামী লীগে? এই প্রশ্নটিই এখন সবার মুখে মুখে।
সম্প্রতি সচিবালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, তার ওপর দায়িত্ব দেয়া মানেই প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের আমানত তার ওপর অর্পণ করলেন। এ আমানত রক্ষা করা তার পবিত্র দায়িত্ব।
অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারে কাউন্সিলে গণজাগরণ সৃষ্টি হবে দাবি করে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রে তেমন পরিবর্তন না হওয়ায় বাড়ছে না কমিটির কলেবর।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অন্যান্য বারের সম্মেলনের চেয়ে এবার কাউন্সিলরদের উপস্থিতি হবে চোখে পড়ার মতো। আশা করি, এবারও একটি সুশৃঙ্খল সম্মেলন হবে। আমাদের সম্মেলনের জন্য গঠিত শৃঙ্খলা কমিটি সেভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন।
কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক, এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে আলোচনা তুমুল। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তৃতীয় মেয়াদে থাকছেন নাকি দল নতুন মুখ খুঁজছে? আর টানা তৃতীয় মেয়াদে দলের দায়িত্ব পালনে কতটা প্রস্তুত কাদের? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আমার ওপর দায়িত্ব মানেই প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের আমানত আমার ওপর অর্পণ করলেন। এ আমানত রক্ষা করা আমার পবিত্র দায়িত্ব।
সাংগঠনিকভাবে নিজেকে সফল দাবি করলেও ব্যর্থতার কথাও স্বীকার করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তবে মহামারি করোনা না থাকলে সফলতার অংশ আরও বেশি হতে বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি বলেন, একটা বছর যদি আমরা পুরো পেতাম তাহলে যে ব্যর্থটা হয়েছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে পারতাম। করোনা মহামারির ওপর তো কারও হাত নেই। কাজেই সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও আছে।
সাধারণ সম্পাদক না হলেও ক্ষোভ নেই দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দল যেখানে দায়িত্ব দেবে, সেখানেই কাজ করতে চান।
শেখ হাসিনা সভাপতি পদে ৯ বার দায়িত্ব পালন করলেও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন এসেছে বার বার। গত দুই জাতীয় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ পদে নির্বাচিত হন। তার আগে ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার আগে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল জলিল। তাদের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।
এরইমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। এই বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মঞ্চে আসার পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে।
এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারা দেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন।
পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।