নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: নারী কেলেঙ্কারি ও ঘুষ কেলেঙ্কারির জন্ম দেওয়া বহুল আলোচিত পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের লাইসেন্স করা অস্ত্র ও গুলি জব্দের জন্য মাগুরা জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার এই চিঠি দেওয়া হয়। ওই জেলা থেকে মিজান অস্ত্রের লাইসেন্সটি করেছিলেন।
অন্যদিকে ডিআইজি মিজান তাঁর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার যে অভিযোগ দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে করেছেন তার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক। সে কারণে বাছিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সংস্থাটি। এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) বরাবর চিঠি দিয়েছে দুদক। সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও গতকাল পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে তাঁকে গ্রেপ্তারে কোনো আইনগত সমস্যা নেই। যেকোনো সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটরিয়ামে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী’ আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে অবশ্যই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিআইজি মিজান গোপনে বিদেশে চলে যেতে পারেন কি না—সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি মন্ত্রী।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর ডিআইজি মিজানের অনেক চাকরির সুবিধা স্থগিত করা হবে। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও চলমান থাকবে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও অভিযোগ আইনগতভাবে প্রমাণিত হলে তিনি স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হতে পারেন।
দুদক সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজানুর রহমান ১৯৯৭ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৮ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাগুরায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেরেটা মডেলের পিস্তলের লাইসেন্স পান এবং ১০ রাউন্ড গুলি কেনেন। এই অস্ত্র তাঁর সঙ্গেই থাকে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য সিটিজেন নিউজকে বলেন, ডিআইজি মিজানের ব্যক্তিগত লাইসেন্স করা অস্ত্র ও গুলি জব্দ করার জন্য মাগুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মাগুরা জেলা প্রশাসক আলী আকবর গত রাতে সিটিজনে নিউজকে বলেন, ‘দুদক চিঠি পাঠালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো এমন চিঠি পাইনি।’
মিজানের অস্ত্রের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানিয়েছেন মাগুরার পুলিশ সুপার (এসপি) খান মোহাম্মদ রেজোয়ানও।
সাময়িক বরখাস্তকৃত দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) চিঠি দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধানদল। চিঠিতে বলা হয়েছে, খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন ও মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের সত্যতা দুদকের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। ইতিমধ্যে তাঁকে তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি সপরিবারে দেশত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই অনুসন্ধান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য তাঁর বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত আবশ্যক। চিঠিতে তাঁর পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিআইজি মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেড় বছর আগে মিজানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ওই সময় দুটি তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়। এরই মধ্যে গত ৮ জুন অবৈধ সম্পদের তদন্তকালে রেহাই পাওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে দাবি করেন মিজান। গণমাধ্যমে ঘুষ কেলেঙ্কারি আলোচিত হলে দুদকের ওই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বেশ কিছুদিন বহাল তবিয়তে ছিলেন ডিআইজি মিজান। গত সপ্তাহে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপারেশন) ড. মইনুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
এদিকে দুদকের তদন্তে মিজান ও তাঁর স্বজনদের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। গত সোমবার সংস্থাটি মিজানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।