নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: উজানে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর, রাজশাহী এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে সিলেট, সুনামগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। সিলেট অঞ্চলের পরিস্থিতি তুলনামূলক বেশি খারাপ।
এরই মধ্যে সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদী বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। উত্তরে তিস্তাও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই। এই নদীতে পানি বাড়লে উত্তরের পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে। পানি বাড়ছে পদ্মারও।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এসব জেলায় পানি বাড়তে পারে। তবে ৪৮ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে যেতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী উদয় রায়হান ঢাকা টাইমকে বলেন, ‘দেশের বেশ কিছু স্থানে মৌসুমি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট পাঁচটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছিল। এখনো বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরো কিছুটা বাড়তে পারে।’
ডুবেছে সুরমার দুই কূল
সিলেটে সুরমা নদী বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে বইছে। প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকা, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুর, ষোলঘর,
কাজিরপয়েন্ট, আরপিননগর, বিলপার, নতুনপাড়া, তেঘরিয়াসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে ৪১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়েছে সুরমায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দীক ভূঁইয়া বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪১৫ মিলিমিটার, যা এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।’
‘এত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা পৌরসভার ড্রেনের নেই। ফলে অনেক এলাকায় জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়তে পারে।’
বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সুনামগঞ্জ শহরের ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের।
ষোলঘর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অধিকাংশ পয়ঃনিষ্কাশন নালা ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ। তাই সামান্য বৃষ্টি অথবা নদীর পানি বাড়লেই শহরে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইয়াসিনুর রশিদ বলেন, ‘সুরমায় পানি বাড়লে সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশ করা স্বাভাবিক বিষয়। এ পানি দিনের মধ্যেই হাওরে চলে যায়। কিন্তু এ বছর ড্রেনে ময়লা জমে যাওযায় এবং অপরিকল্পিত বাসা-বাড়ি নির্মাণের কারণে সড়কের পানি নামতে পারছে না।’
টানা তিন দিনের বৃষ্টি বন্যা প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকা। নগরীর বঙ্গবীর রোড, ফিরোজপুর, ভার্তখলা, মেনিখলা, বারখলা, পাটানপাড়া, নাইরওপুল পয়েন্ট, মিরাবাজার পাঠানটুলা এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি বড় আকার ধারণ করেছে। এরমধ্যে কিছু এলাকায় কোমর পানি পর্যন্ত জমেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় স্বাভাবিক জনজীবন বাধার মুখে পড়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পানি পৌঁছে গেছে বাসাবাড়িতেও। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
উত্তরের পরিস্থিতি অবনতির দিকে
রংপুরে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভাঙন ও প্লাবন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের।
টানা বর্ষণের প্রভাব পড়েছে দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে। প্লাবিত হয়েছে জেলার ভুরুঙ্গামারী এলাকা। এখানকার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে।
রাজশাহীতে বাড়ছে পদ্মার পানি। শুক্রবার নগরীর পদ্মাগার্ডেন এলাকায় নদীটির পানি ৯ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ডুবে গেছে নদীর মাঝে ছোট ছোট বালুচর। এতে আতঙ্কিত পঞ্চবটি, বুলনপুর ও সোনাইকান্দিসহ নদীপাড়ের মানুষ।
নেত্রকোণাতেও তলিয়েছে লোকালয়
জেলার কলমাকান্দার পাচগাঁও নদীর বাঁধ ভেঙে উপজেলার সীমান্তবর্তী রংছাতি, খারনৈ ও লেংগুরা ইউনিয়নে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু কাঁচা ঘর ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি, পুকুর ও ফিশারির মাছ ভেসে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় পানিবন্দি ওইসব পরিবারের লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সীমান্তবর্তী পাচগাঁও এলাকায় নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাচগাঁও, ধারাপাড়া, নয়া চৈতাপাড়া, রামনাথপুর, নংক্লাই, কৃষ্টপুর, রায়পুর, নতুন বাজার, বারমারা, খারনৈ ইউনিয়নের সুন্দরীঘাট, বাউশাম, ভাষাণকুড়া এবং লেংগুরা ইউনিয়নের চৈতা, লেংগুরা বাজার, ফুলবাড়ি, ঝিগাতলা ও শিবপুর গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
খারনৈ ইউনিয়নের সুন্দরীঘাট-বাউশাম কাচা রাস্তার দুই পাশের মাটি ভেঙে গেছে। দেবে গেছে বাউশা বাজার ব্রিজ। যে কোন সময় ব্রিজটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।