রাজধানীতে অপরাধের মাত্রা দ্রুত বাড়ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, মাদক কেনাবেচাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যেগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। ফলে জনজীবনে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। রাতে তো বটেই, দিনেও এখন অনেক এলাকা নিরাপদ নয়।
রাজধানীতে এমন কিছু এলাকা আছে, যেগুলো সন্ধ্যার পর রীতিমতো অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। গতকাল একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার বসিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকায় গণহারে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ একদল সন্ত্রাসী মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় তারা ২০টির মতো দোকানের মালপত্র লুট ও ভাঙচুর করে।
বসিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকা থেকে চন্দ্রিমা হাউজিং পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় পথচারী এবং নদীর পাশের ওয়াকওয়েতে হাঁটতে আসা লোকজনের কাছ থেকে অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। তাদের হামলায় এক তরুণীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। ভুক্তভোগীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। অবশ্য পুলিশ রবিবার ছিনতাইকারী সন্দেহে ৯ জনকে আটক করেছে।
জানা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অধীন ৫০টি থানাকে আটটি অপরাধ বিভাগে ভাগ করা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ এলাকা হচ্ছে তেজগাঁও বিভাগ। এই বিভাগের অধীনে থাকা ছয়টি থানা হচ্ছে তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, হাতিরঝিল, শেরেবাংলানগর, আদাবর ও মোহাম্মদপুর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের দিন যত কাছে আসবে, অপরাধ সংঘটনের হার তত বাড়বে। ডিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ঢাকাকে নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত করতে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরাও চাই, দ্রুততম সময়ে রাজধানীকে অপরাধমুক্ত করা হোক।
এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ—কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ আরো তীব্র হবে। রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দেবে। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। কারণ নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর। সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র যখন বেপরোয়াভাবেই ছিনতাইয়ে নেমেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। জননিরাপত্তায় কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সর্বত্র মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। যুব সমাজ খুন-খারাপিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এখন কিছু বোঝা না গেলেও অদূর ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটবে। তাই মাদককে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
অভাবে স্বভাব নষ্ট। অভাব-দারিদ্র্য মানুষকে বিপথগামী করে। অপরাধী করে তোলে। অপরাধের ধরন, সংখ্যা ইত্যাদি থেকে বুঝা যায় এর পেছনে অভাব-দারিদ্র্যের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। কাজেই, মানুষের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ কর্মহীন ও বেকার না থাকে। আর্থ-সামাজিক কারণেই সরকারের উচিত উৎপাদনশীল ও অধিক কর্মসংস্থানমুখী খাতে বিনিয়োগ করা। মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় বাড়লে আপনা আপনিই অপরাধ প্রবণতা কমবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অপরাধের প্রবণতা ও সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে নৈতিক অবক্ষয় বিশেষভাবে দায়ী। দেশ ও সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে হলে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও চর্চা বাড়ানোর বিকল্প নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, অপরাধের সংশোধন ও শাস্তি অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সেক্ষেত্রে সংশোধন ও শাস্তি অত্যাবশ্যক। আমরা আশা করব, পুলিশ আইনশৃঙ্খলার উন্নতি বিধান এবং নাগরিক নিরাপত্তা জোরদারে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।
লেখক: দয়াল কুমার বড়ুয়া, কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা।