মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৭৫ বার পঠিত

অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়। প্রবাদটা এখন সবচেয়ে বেশি হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রেই খাটে! যেদিকেই যাচ্ছে প্রোটিয়ারা, দুর্ভাগ্য যে পিছু ছাড়ছে না!

এ নিয়ে পাঁচ পাঁচবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। যে চৌকাঠ পেরোতে পারছে না বলো চোকার্স ট্যাগটা তাদের ললাটে জোটেছিল। সেটি এবারো মোছা গেলো না। ঠিক একই স্থান থেকে একিভাবে বিদায় হলো তাদের।

মজার ব্যাপার হলো, যে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গতকাল চোখে জল এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের। একই দলের সঙ্গে আগেও দুবার সেমিতে হেরে বিদায় নেয় প্রোটিয়ারা। সবমিলিয়ে এবারসহ পাঁচবার সেমি থেকে বাদ পড়লো দক্ষিণ আফ্রিকা।

শুরুটা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। দীর্ঘ ২২ বছর নির্বাসনে থাকার পর বিশ্বকাপে ফিরে এসে দক্ষিণ আফ্রিকা ঝলকই দেখায়। ৮ ম্যাচের মাঝে ৫টিতে জয় পেয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলে তারা। টুর্নামেন্টে তাদের চেয়ে বেশি জয় ছিল কেবল মাত্র নিউজিল্যান্ডের।

সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালোই খেলছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৫ ওভারে ২৫৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে একপর্যায়ে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৩ বলে ২২ রান। দুই ব্যাটসম্যান ম্যাকমিলান আর ডেভ রিচার্ডসন যেভাবে খেলছিলেন তাতে টার্গেটটাকে অসম্ভব মনে হচ্ছিল না।

কিন্তু ম্যাচের এমন সময়ে বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। যখন খেলা শুরু হয় তখন দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেই সময়কার নিয়মানুযায়ী রিভাইসড টার্গেট দেওয়া হয় ১ বলে ২২ রান। এমন টার্গেট শুনেই সবাই অবাক। যা হবার তাই হলো। ম্যাচের সমাপ্তি ঘটলো আর দক্ষিণ আফ্রিকা দুর্ভাগ্যের খাতা খুললো। সেই যে শুরু আজ অবধি সেমির ধাঁধা মেলানো যায়নি।

১৯৯৯ সালের দুঃস্মৃতিও মনে পড়ে গেলো। ৪৯.২ ওভারে মাত্র ২১৩ রান করেই অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এই সামান্য রানটাকেও মহাকঠিন বানিয়ে ফেলেন জাদুকরী স্পিনার শেন ওয়ার্ন। অনেক নাটকীয়তার পর ম্যাচের শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯ রানের।

প্রথম দুই বলেই দুটো চার মেরে ম্যাচটিকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এসেছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। বাকি ছিল ৪ বলে ১ রান। নিরুপায় স্টিভ ওয়াহ সব ফিল্ডারকে বৃত্তের ভেতরে নিয়ে আসেন। স্নায়ুযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত স্কোরলাইন হলো সমান।

টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী মুখোমুখি লড়াইতে এগিয়ে থাকার জন্য অস্ট্রেলিয়া চলে গেল ফাইনালে। এরপর ২০০৭ আসরে টপ ফেভারিট হিসেবেই বিশ্বকাপ খেলতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমি পর্যন্ত খুব খারাপ খেলেনি।

কিন্তু সেমিতে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলে। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ম্যাকগ্রার তোপের মুখে পড়ে মাত্র ২৭ রানেই ৫ উইকেট পড়ার পর ম্যাচের বাকি সময়টা হয়ে যায় শুধুমাত্রই আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে।

আগের হতাশা ভুলে নতুন করে স্বপ্ন দেখেছিল প্রোটিয়ারা। ২০১৫ আসরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়ে যায় দলটি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চমৎকার ফিল্ডার হিসেবে পরিচিত এবি ডি ভিলিয়ার্স কোরি এন্ডারসনের সহজ রান আউট মিস করেন, যিনি পরবর্তীতে গ্র্যান্ড এলিয়টের সঙ্গে শতরানের পার্টনারশিপ করেন।

এছাড়া উইকেট কিপার ডি কক আরেকটি সহজ রান আউট মিস করেন। এগুলো ছাড়াও ম্যাচে আরো কিছু ক্যাচ মিসের ঘটনা ঘটে। শেষপর্যন্ত শেষ ২ বলে যখন ৫ রানের প্রয়োজন ছিল, তখন সময়ের সেরা বোলার ডেল স্টেইনের বলে এলিয়ট দুর্দান্ত একটা ছক্কা মেরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চুপ করিয়ে দেন।

শুধু ওয়ানডে বিশ্বকাপই নয়, আইসিসির অন্যান্ন বড় ইভেন্টেও সেভাবে আলো ছড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। যার একটি ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সে সময় র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর দল হিসেবে মিশন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাকি তিন দল ছিল পাকিস্তান, ভারত আর শ্রীলঙ্কা।

প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৯৬ রানে হারিয়ে ফেভারিটের মতোই শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু র‍্যাঙ্কিংয়ে ৮ নম্বরে থাকা পাকিস্তানের সাথে পরের ম্যাচেই ধরা খায় তারা। ভারতের সাথে শেষ ম্যাচটি তাই হয়ে যায় বাঁচা-মরার লড়াই। ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১১৬ রান থেকে ১৯১ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

শেষ ৫১ রানে তারা ৮ উইকেট হারায়, যার মাঝে তিনটি ছিল রান আউট। হট ফেভারিট দল গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে নিজেদের নামের পাশে চোকার্স খেতাব লাগানোর স্বার্থকতা আরেকবার প্রমাণ করে, গতকাল কলকাতায় একই ছবির পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেই অজিদের কাছে হেরে বিদায় নেয় প্রোটিয়ারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com