বিনোদন প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ:কবির গানকে ছড়িয়ে দিয়েছেন শ্রোতাদের অন্তরে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানকে তিনি সাধনা হিসেবে নিয়েছিলেন। তার কণ্ঠ ধরে নজরুলের কথারা মিষ্টি সুরের বৃষ্টি হয়ে নামতো। তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুলসংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম।
তারই স্বামী কমল দাশগুপ্ত। উপমহাদেশের অন্যতম প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী, প্রসিদ্ধ সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকে গ্রামোফোন ডিস্কে তার সুরে গাওয়া বহু গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।
বাংলা সংগীতের বরণীয় এই দম্পতির জন্মদিন আজ। কমল দাশগুপ্তের আজ ১০৭তম জন্মবার্ষিকী। আর ফিরোজা বেগমের ৮৯তম।
এই দিনে প্রিয় দুই শিল্পীকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে তার ভক্ত-অনুরাগীরা। নানা আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠনও।
তাদের জন্মদিন উপলক্ষে কণ্ঠশিল্পী সুস্মিতা আনিস প্রকাশ করছেন কমল দাশগুপ্তের সুর ও ফিরোজা বেগমের সংগীতায়োজনের কালজয়ী গানের সংকলন। অ্যালবামের গানগুলোকে রিমিক্স ও রি-মাস্টার করে ডিজিটাল ভার্সনে প্রকাশ করা হচ্ছে।
১৯১২ সালের ২৮ জুলাই জন্ম গ্রহণ করেন কমল দাশগুপ্ত। শৈশবকালে বড় ভাই অধ্যাপক বিমল দাশগুপ্তের কাছে খেয়াল গান দিয়ে সংগীত জীবন শুরু করেন। ডি. এল. রায়ের পুত্র দিলীপ রায়, কৃষ্ণচন্দ্র দে (কানা কেষ্ট) এবং ওস্তাদ জমিরউদ্দিন খাঁর কাছে খেয়াল, ঠুমরী, দাদরা ও গজলের তালিম গ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম তারাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত। বড় ভাইয়ের নাম সুবল দাশগুপ্ত। ক্রীড়াজগতের স্বনামধন্য পঙ্কজ গুপ্ত সম্পর্কে তার মাতুল হন।
৪৭ বছর বয়সে ধর্মান্তরিত হয়ে ১৯৫৫ সালে বাংলাদেশের তথা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম নজরুল সংগীত ব্যক্তিত্ব ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করেন কমল দাশগুপ্ত। তাদের সংসারে তিন সন্তান – তাহসিন, হামিন ও শাফিন রয়েছে।
২০ জুলাই, ১৯৭৪ সালে প্রায় অযত্নে-অবহেলায় ও বিনা চিকিৎসায় ঢাকায় এই গুণী শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।
অন্যদিকে ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ফিরোজা বেগম। তার বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন বৃটিশ সরকারের প্রথম মুসলমান সরকারি কৌঁসুলি। মাতা বেগম কওকাবুন্নেসা।
ফিরোজা বেগম ১৯৪২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কলকাতায় নিয়মিত গান করেছেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। এইচএমভি থেকে তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪২ সালের ডিসেম্বরে। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে।
আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, গজল, ভজন সব গানই তখন করেছেন। ১৯৫১ সালে কলকাতায় কমল দাশগুপ্তের সুরে বেশকিছু গান করেন। এভাবেই তার সংগীত গুরু হয়ে ওঠেন কমল দাশগুপ্ত। তিনি নজরুলের কথার সুর দিতেন, আর ফিরোজা বেগম সেগুলো কণ্ঠে তুলে নিতেন।
ফিরোজা বেগম স্বাধীনতা পুরস্কার, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ টিভি শিল্পী পুরস্কার(পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, স্যার সলিমুল্লাহ স্বর্ণপদক, দীননাথ সেন স্বর্ণপদক, সত্যজিৎ রায় স্বর্ণপদকসহ আরও অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১২সালে তাকে বিশেষ নজরুল সম্মাননা দেয়।
২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ফিরোজা বেগম।