নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: দেশের জ্যেষ্ঠ ও অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ২৫টি ওষুধের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সেই সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সব জেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের জন্যও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
রাজধানীর বাড্ডায় বিকল্পধারার কার্যালয়ে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকল্পধারা ও যুক্তফ্রন্টের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘ভারতে ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন), ৮০ উপরে বয়স্ক নাগরিকদের সুপার সিনিয়র সিটিজেন বা অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিক বলে উল্লেখ করা হয়। সে দেশে তাদের সংখ্যা শতকরা ১৯ ভাগ। যেহেতু বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে বেশি, তাই আমাদের জ্যেষ্ঠ ও অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকের সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগ হতে পারে।’
আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই ২০ ভাগ জনগণ জোরে আওয়াজ তুলতে পারে না, দাবি তুলতে পারে না এবং কাঁদতে পারে না, প্রতিবাদ করতে পারে না, সমাজের কাছে চাইতে পারে না। হতাশা, বিষণ্নতা তাদের নিত্যসঙ্গী।’
তিনি বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ এবং অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সাতটি রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরনের হাসপাতাল গড়ে তুললে এবং নিজস্ব কারখানায় ওষুধ তৈরি করলে অর্ধেকের চেয়ে কম দামে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।’
বি. চৌধুরী বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ এবং অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সেবার জন্য হাসপাতালগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রচুরসংখ্যক প্রশিক্ষিত নার্স। এদের সহানুভূতি ও সহমর্মিতার সঙ্গে সেবা দিতে হবে। অল্পসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে জুনিয়র চিকিৎসকদের দুই মাসের সর্বাত্মক প্রশিক্ষণ দিলে এ জুনিয়র চিকিৎসকরা রোগীদের সাতটি রোগের জন্য প্রথম শ্রেণির চিকিৎসা দিতে পারবেন। এভাবে সবচাইতে কম খরচে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সেবার জন্য রাজধানী এবং পর্যায়ক্রমে সব জেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
রোগ বিজ্ঞানে উপমাদেশের প্রবীণ এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা এ বয়সে বড় বড় ৭টি রোগ হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, ক্যান্সার, অর্ধাঙ্গ, বিষণ্নতা এবং কিডনি রোগের শিকার হন। এদের প্রত্যেকটি অত্যন্ত গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এজন্য বাকি জীবন ক্রমাগত চিকিৎসা করতেই হবে। চিকিৎসক এবং হাসপাতালের শরণাপন্ন হতেই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু ওষুধের মূল্য প্রতিদিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং পথ্যের দামও বাড়ছে। অথচ নাজুক এ সব জ্যেষ্ঠ এবং অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকের জীবন। তাদের পারিবারিক পরিস্থিতি, প্রায় সবাই এরা সঙ্গীহীন এবং একাকীত্বের বেদনায় ভুগছে, কতিপয় ভাগ্যবান ছাড়া। বেশিরভাগ সন্তান জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সঙ্গে ইচ্ছা থাকলেও বসবাস করতে পারে না। কারণ তাদের দেশে-বিদেশে দূরে কোথাও থাকতে হয়। আরও একটি কঠোর বাস্তবতা এসব নাগরিকের কারও কারও বাকি জীবন বৃদ্ধাশ্রমে কাটে।’
এ সব সমস্যার সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বি. চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এসব মানুষ সারাজীবন দেশকে দিয়েই গেছেন। এ শতকরা ২০ ভাগ মানুষকে গুরুত্ব দিতেই হবে। এদের মধ্যে যারা এখনও কাজ করেন এবং কাজের জন্য আয়কর দেন তাদের স্বাস্থ্যহীনতা এবং যৌবনে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে বার্ধক্যে তাদের আয়কর সমস্যার সমাধান করতে হবে। ভারতে ৬০ থেকে ৮০ বছর এবং ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে আয়করের দুটি স্ল্যাব করা হয়েছে এবং তাদের আয়কর অনেক কম দিতে হয়। যা দিয়ে তাদের চিকিৎসার খরচে একটু হলেও সুরাহা হয়।’
করোনারি হার্টের রোগী ব্যাপক সংখ্যায় বাড়ছে উল্লেখ করে ডা. চৌধুরী বলেন, ‘বয়স্কদের মধ্যে এর প্রকোপ আরও বেশি। তাদের জন্য চার প্রকার ওষুধ অপরিহার্য। সবগুলো ওষুধের দাম কমানোর বিষয় বিবেচনা করতে হবে। বিষন্নতার ক্ষেত্রে ২/৩ প্রকারের ওষুধই যথেষ্ট। অর্ধাঙ্গ রোগীদের চিকিৎসায় প্রায়ই ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার এবং হার্টের রোগের ওষুধ লাগে, অর্ধাঙ্গ প্রায়ই এ ৩টি রোগের অনুসঙ্গ।’
এ প্রসঙ্গে বি. চৌধুরী আরও বলেন, ‘ক্যান্সারের চিকিৎসা সময় মতো করতে পারলে সার্জারিতে অসামান্য সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। প্রায়ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয়। এ কেমোথেরাপির প্রতিটি ওষুধ অত্যন্ত দুর্মূল্য। হিসাব করলে দেখা যাবে ক্যান্সার কেমোসহ বৃদ্ধদের এ সাতটি ক্রনিক রোগের মাত্র ২৫টি ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে জ্যেষ্ঠ, অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের চিকিৎসার বোঝা বেশ কিছুটা হালকা হবে।’
বি. চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনে বিদ্যমান আইনটি শক্ত হলেও এর প্রয়োগ না থাকায় দেশে শিশু ও নারী নির্যাতনের হার ভয়ংকরভাবে বাড়ছে। ১২ বছরের নিচে শিশু ধর্ষণের শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান করার কথা বিবেচনায় আনতে হবে। ভারতীয় আইনে শিশু ধর্ষণে ফাঁসির বিধান রয়েছে।’
বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলীয় মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরী এমপি, সহ-সভাপতি এনায়েত কবির, ওবায়দুর রহমান মৃধা, বিএম নিজাম উদ্দিন, মাহমুদ হাসান রানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিকল্পধারার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, লেবার পার্টির মহাসচিব আবদুল্লা আল মামুন, বিকল্পধারার শিশু কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নওয়াব বাহাদুর, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা কবির হোসেন, বিকল্পধারার সহ-দপতর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলু, যুবধারার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শিকদার মাসুদ রানা, যুবধারার সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শিহাব, বিকল্পধারার মহিলা নেত্রী শেখ মুক্তা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক ধারার দফতর সম্পাদক মিরাজ আহাম্মেদ প্রমুখ।