অনলাইন ডেস্ক,সিটিজেন নিউজ: ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার দুই বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করে। ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার দুই বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ঢলের দুই বছর পূর্তিতে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দারা মিয়ানমানের সেনা নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং দায়ীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ২২টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ডি-৪ নামক স্থানে জমায়েত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং ‘ভয়েজ অব রোহিঙ্গা’ সংগঠনের নেতা মাস্টার নুরুল কবির।
‘রোহিঙ্গা সমস্যার দুই বছর : সমাধান কোথায়?’ শিরোনামে এক বিবৃতিতে ‘সীমান্তবিহীন চিকিৎসকদল’ নামে পরিচিত সংগঠন ‘মেডিসিনস স্যাঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ)’ বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের প্রান্তিক রোহিঙ্গা সম্প্রদায় কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকারে পরিণত হয়ে আসছে। দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সহিংসতা পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের এই অঞ্চলে আইনগত বৈধতার সংকট সমাধানে অথবা তাদের মিয়ানমার ছেড়ে চলে আসার অন্তর্নিহিত কারণগুলো খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে।
রোহিঙ্গার সেই ঢল যে এত বড় ও দীর্ঘমেয়াদি হবে সেটা ভাবতে পারেনি স্থানীয় বাসিন্দারা। সেদিন যারা মানবিকতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল আজ তারাই বড় দুর্দশা ও ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। অনেকের ফসলি জমি, বাড়ির উঠান পর্যন্ত দখল হয়ে গেছে। কবে নাগাদ রোহিঙ্গারা ফিরবে বা আদৌ তারা ফিরবে কি না, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
জানা গেছে, নতুন ও পুরনো মিলিয়ে মিয়ানমারের ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলার ২৮টি পাহাড়ের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরের দুই লাখেরও বেশি ঝুপড়িতে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। এর প্রভাব পড়েছে পর্যটন জেলা কক্সবাজারেই। ওই অঞ্চলের উন্নয়ন হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপত্তা ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে দুই উপজেলার বাসিন্দারা।
গত জুলাই মাসে বেসরকারি নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের দারিদ্র্য ৩ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় আড়াই হাজার পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এর বাইরে আরো এক হাজার ৩০০ পরিবার ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে সেখানে ৪৬৪ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বনজ সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।