অনলাইন ডেস্ক: খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আনন্দধারা। নানা বর্ণ আলোকের রোশনাইয়ে ভেসে যাচ্ছে গির্জা, ঘরদুয়ার আর অভিজাত হোটেলগুলো। সাজানো হয়েছে গোশালা, ক্রিসমাস ট্রি আর বর্ণময় বাতি দিয়ে। আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড় দিন।
বিপথে যাওয়া মানুষের আলোর দিশারী হয়ে এদিন পৃথিবীতে আসেন যিশুখ্রিস্ট। বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির কোলে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। ঈশ্বরের অপার মহিমা ও মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তির জন্য যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল বলে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। ‘পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা’ করার
দর্শন শিখিয়ে গেছেন তিনি। ঘৃণাকে দূরে ঠেলে ভালোবাসো দিয়ে মানবজাতিকে টেনে নিয়েছেন বুকে। পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রবর্তনই ছিল যিশুখ্রিস্টের অন্যতম ব্রত। বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য মহামতি যিশু নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার জীবনাচরণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলির জন্য মানব ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি।
সারাবিশ্বের যিশুর অনুসারীদের মতো আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও আজ বুধবার বড় দিন উদযাপন করবে খ্রিস্টানরা। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়াও বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়ে বড় দিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘বিশ্বে মহামতি যিশুখ্রিস্টের আবির্ভাব ছিল এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। তিনি ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত এবং আলোর দিশারী। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে তিনি বহু ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও খ্রিস্টধর্মের সুমহান বাণী প্রচার করেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম, আচার ও অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছেন। বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় দিনে খ্রিস্টানধর্মাবলম্বীসহ সব নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তার বাণীতে।
বড় দিন উপলক্ষে আজ বুধবার সরকারি ছুটি। রাজধানীসহ দেশের গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে জমকালোভাবে। রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনসহ পাঁচতারা হোটেলগুলোতেও সান্তা ক্লজ, ক্রিসমাস ট্রি এবং আলোকসজ্জায় বড় দিনের বিশেষ আয়োজন রাখা হয়েছে। গত রাতে গির্জায় ছিল বিশেষ প্রার্থনা। আজ সকাল থেকেও রয়েছে বড় দিনের প্রার্থনা। দিনটি উপলক্ষে খ্রিস্টান পরিবারে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের কেক ও পিঠা, রয়েছে বিশেষ খাবারের আয়োজন।