হাফসা :গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অধীনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এক অসাধারণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা সংস্থাটিকে সাফল্যের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। আব্দুল মুহিত চৌধুরী চেয়ারম্যান হিসেবে এবং ড. মো: সাফিকুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গৃহীত সুদূরপ্রসারী সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো বিমানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনছে।
আর্থিক সাফল্যের নতুন মাইলফলক:
নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে বিমানের টিকেটিং সিস্টেমে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া ব্যবস্থা, সকল চ্যানেলে টিকিটের উন্মুক্তকরণ, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং টিকিট সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের ফলে বিমানের রাজস্ব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিমানের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এই কার্যকর পদক্ষেপগুলির ফলস্বরূপ চলতি বছরে বিমান আনুমানিক ৮০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের পথে রয়েছে, যা সংস্থাটির আর্থিক ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে।
যাত্রীসেবায় বৈপ্লবিক উন্নতি
যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে বিমান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এয়ারপোর্টে বিভিন্ন সার্ভেইলেন্স ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বর্তমানে প্রথম লাগেজ মাত্র ১৮ মিনিটের মধ্যে টার্মিনালের অভ্যন্তরের বেল্টে চলে আসছে, যা যাত্রীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের কাছ থেকে বিমানের সেবার মান নিয়ে ইতিবাচক রিভিউ পাওয়া যাচ্ছে, যা যাত্রী সন্তুষ্টির একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
কার্গো ব্যবসায় অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি
বিমানের কার্গো বিভাগেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছরে কার্গো থেকে আয় বিগত বছরের তুলনায় ২৪% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কার্গো পরিবহনের সক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। এই প্রবৃদ্ধি বিমানের সামগ্রিক আয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে ঝলমলে বিমান:
বিমানের এই নিরন্তর প্রচেষ্টা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত এভিয়েশন অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে বিমানকে ‘এয়ারলাইন্স অব দ্য ইয়ার’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে। এছাড়াও, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ৫টি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
* দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় গোল্ড পদক।
* ইকোনমি ক্লাসে ইন-ফ্লাইট খাবারের জন্য গোল্ড পদক।
* বেস্ট ইম্প্রুভড এয়ারলাইন্স ক্যাটাগরিতে সিলভার পদক।
* অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় ব্রোঞ্জ পদক।
এই অর্জনগুলো বিমানের পেশাদারিত্ব এবং সেবার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ।
সুশাসন ও কর্মীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ:
বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত আমলে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির মাধ্যমে অনেক ভুক্তভোগী তাদের আবেদন দাখিল করে ন্যায়বিচার পেয়েছেন এবং কমিটি এখনো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটি বিমানের অভ্যন্তরে একটি সুস্থ ও কর্মীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদানের জন্য বিমান শত শত দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়েছে এবং বিখ্যাত জিএসই (গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট) ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি থেকে উন্নতমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট ক্রয় করেছে, যা আধুনিক যাত্রীসেবা প্রদানে বিমানের সক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স:
দুর্নীতি ও বেআইনি কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিমান কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিগত আমলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিগত ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর তৎকালীন বিমানের আইন বিভাগের প্রধান ও কোম্পানি সেক্রেটারি রাশেদ মেহের চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের জন্য দুটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জিরো টলারেন্স নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
হজ কার্যক্রমে নজিরবিহীন সাফল্য :
চলতি বছরে বিমান হজ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে ও সফলভাবে সম্পন্ন করেছে, যা ছিল নজিরবিহীন। এটি বিমানের সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিমানের এই নবযাত্রা কেবল আর্থিক সাফল্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, কর্মীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে। আব্দুল মুহিত চৌধুরী এবং ড. মো: সাফিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সত্যিই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং দেশের এভিয়েশন শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।