গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে চাঞ্চল্যকর চার হত্যাকাণ্ডের ‘মূল হোতা’ পারভেজ (২০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রবিবার (২৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে উপজেলার আবদার এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই এলাকার কাজিম উদ্দিনের ছেলে। সোমবার (২৭ এপ্রিল) গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান এ তথ্য জানান।
হাফিজুর রহমান জানান, পারভেজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বসতঘর থেকে রক্তমাখা কাপড়, মাটির নিচ থেকে মোবাইল ফোন, পাজামার পকেট থেকে তিনটি গলার চেইন, কানের দুল ও লুট করা আরও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। সে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। সংবাদ সম্মেলন করে চাঞ্চল্যকর বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, ২৩ এপ্রিল গত বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার একটি বাড়ি থেকে মা স্মৃতি ফাতেমা, দুই মেয়ে ও এক ছেলের জবাই করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ এপ্রিল বুধবার দিবাগত রাতের কোনও একসময় দুর্বৃত্তরা চার জনকে গলা কেটে হত্যা করে। নিহতরা হলেন– আবদার এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওয়ারিন (১২) ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)।
২৪ এপ্রিল শুক্রবার নিহত স্মৃতি ফাতেমার শ্বশুর আবুল হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাতদের অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পর পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন টিম একযোগে কাজ করছিল।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ঘটনার আগের দিন ২২ এপ্রিল বুধবার নিহত স্মৃতি ফাতেমা তার দেবরকে জাহিদ হাসান আরিফকে বৃহস্পতিবার সকালে বাজার করে দেওয়ার কথা বলেন। সকাল ১০টার দিকে বাজার নিয়ে গিয়ে ডাকাডাকি করে কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে দেবর আরিফ ফিরে আসেন। পরে একই দিন দুপুর ৩টার দিকে আরিফ আবারও ডাকাডাকি করলেও সাড়া মেলেনি। পরে সাড়া না পেয়ে আরিফ তার ছেলে নাবিলকে (১০) তার টিনশেড ঘরের চালের ওপর দিয়ে ভেতরে পাঠালে সে জানালা দিয়ে বাড়ির লোকদের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পায়। পরে বাড়ির নিচতলার পেছনের দরজা খোলা পেয়ে বাড়ির দোতলার ঘরে গিয়ে ভাবী স্মৃতি ফাতেমাসহ তার সন্তানদের গলা কেটে হত্যার আলামত দেখতে পান আরিফ। এ সময় ঘরের লাগেজ এবং কিছু আসবাব এলোমেলো ছিল। আরিফ এ ঘটনা তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আশপাশের লোকজনকে অবহিত করেন। ইউপি সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু হত্যার ঘটনাটি শ্রীপুর থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, চার হত্যাকাণ্ডই পারভেজের অঘটন নয়। পারভেজের নামে শ্রীপুর থানায় হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছিল। মামলাটি বর্তমানে আদালতে রয়েছে।
আবদার এলাকার হাসান ওরফে ফালান জানান, ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার কন্যা নীলিমাকে (৭) ধর্ষণ ও পরে মাথায় আঘাত এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে ওই পারভেজ। এ ঘটনায় পারভেজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ও পরে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। পরে বয়স বিবেচনায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয় পারভেজ।
নীলিমার বাবা হাসান ওরফে ফালান আরও জানান, জামিনে মুক্তির পর পারভেজ তার পরিবারের লোকদের নিয়ে কন্যা নীলিমা হত্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা ধরনের চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। এ বিষয়ে ২০১৮ সালে ২৮ আগস্ট নিরাপত্তা চেয়ে পারভেজসহ তার বাবা-মা ও স্বজনদের অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, পারভেজ এলাকার একজন চিহ্নিত বখাটে। মাদকসেবন ও বেচাকেনার সঙ্গেও সে জড়িত ছিল। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ তাকে অনেকটা এড়িয়ে চলতো।