মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাংবাদিক সম্মেলন রহস্যজনক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য হুইপপুত্র শারুনের টাকায় এই সাংবাদিক সম্মেলন বলে মন্তব্য করেছেন মৃত মুনিয়ার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ।
বুধবার (২৬ মে) বেলা সাড়ে ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। মোশরাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ওই সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনের বিষয়টি আপন বড় ভাইকেও আগে থেকে জানানো হয়নি। সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার পর লোক মুখে শুনে বিষ্ময় প্রকাশ করেন সবুজ। তিনি বলেন, আমার বোন মারা গেছে, আর আমিই জানতে পারলাম না সাংবাদিক সম্মেলনের কথা। কারা এই সংবাদিক সম্মেলন করেছেন কি তাদের উদ্দেশ্য! আমার চেয়ে তাদের কষ্ট বেশি হয়ে গেলো! অতি ভক্তি কিন্তু চোরের লক্ষণ। সবুজ বলেন, আমার বোন মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলাটি গুলশান থানায় তদন্তাধীন রয়েছে। এমন অবস্থায় অতি উৎসাহী তৎপরতা খুবই রহস্যজনক।
তিনি বলেন, পুলিশের উপর চাপ তৈরি করতে এবং আমার দায়েরকৃত হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য এই অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমি মামলা দায়ের করার পর থেকেই ওই পক্ষটি তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা মনে করছে, ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে নিতে পারলে প্রকৃত হত্যাকারি (শারুন) বেঁচে যাবেন। তাই তাদের এই অপতৎপরতা। আমার কাছে তথ্য রয়েছে হত্যাকারি হুইপপুত্র শারুন এর পেছনে টাকা ঢালছেন। তিনি এসব করিয়ে পার পেতে চাইছেন।
ভূঁইফোড় ওই সংগঠনটি কুমিল্লাতেও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন। স্থানীয়রা প্রথমে তাদের উদ্দেশ্য ধরতে পারেনি। এখন তাদের জোচ্চুরি ধরে ফেলেছেন তাই আর এলাকায় কোনো কর্মসূচি পালন করছেন না। বাধ্য হয়ে ঢাকায় গেছেন সাংবাদিক সম্মেলন করতে। আমার ভাবতে কষ্ট হয় একজন হত্যাকারির কাছ থেকে টাকা নিয়ে কি করে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে তারা।
তিনি বলেন, আমি মনে করি পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে দেওয়া উচিত। তাহলেই প্রকৃত ঘটনা উঠে আসবে। আমি প্রমাণ করে দেবো শারুন আমার ছোটো বোনকে হত্যা করেছে। তার সঙ্গে মিশে আমার এক বোনকে দুনিয়া ছাড়তে হয়েছে। আরেক বোন এখনও তার ফাঁদে রয়েছে। কোনো গোপন বিষয় রয়েছে যে কারণে শারুনের খপ্পর থেকে বের হতে পারছে না।
সবুজ বলেন, সাংবাদিক সম্মেলন শেষে প্রেসক্লাবের পুর্ব গেটে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ওদের একজন আমাকে ফোন করে জানিয়েছে ঘটনার কথা। আমি পুলিশকে অনুরোধ করবো, এসব উপযাচকদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। আপনারা সুষ্টুভাবে তদন্ত করে যান, প্রকৃত অপরাধি যেনো ছাড়া না পায়।
সাংবাদিক সম্মেলন শেষে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও সামান্য হাতাহাতির ঘটনার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরাও। মামুন নামে এক রিকশা চালক জানিয়েছেন তিনি রিকশা থামিয়ে চা পান করছিলেন, প্রেসক্লাবের গেটে জটলা দেখে এগিয়ে যান। সেখানে কয়েক জনের মধ্যে তুমুল তর্ক দেখতে পান। একজন বলছেন, আমি সংগঠনের নেতা, আমাকে হিসেব দিতে হবে। কেনো আগে থেকে জানানো হলো না?।
সাংবাদিকরা ঘটনার ভিডিও করতে ধরলে ওদের নেতা মেহেদী হাসান এসে বলেন, এই এখানে ঝগড়া করোনা। অফিসে গিয়ে আলোচনা করবো। এখানে কিন্তু অনেক সাংবাদিক রয়েছেন। তারপর তারা তর্ক করতে করতে আব্দুল গনি রোডের দিকে চলে যান। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ব্যানারে এই সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হলেও, শারুনের লোকজন আশপাশে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়। তাদের একজন সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের কপি প্যাকেট থেকে বের করে দেন।
রাজধানীর গুলশানের ভাড়া বাসা থেকে ২৬ এপ্রিল দরজা ভেঙ্গে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর লিগ্যাল অভিভাবক বড় ভাইকে আড়ালে রেখে তড়িঘড়ি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করে বড় বোন নুসরাত জাহান। পরে ঘটনা জানতে পেরে বড় ভাই সবুজ পৃথক একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। কোর্ট প্রথম মামলাটির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন।
অভিযোগ উঠেছে নুসরাত জাহান মুনিয়াকে(২১) উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন বড় বোন নুসরাত-মিজান দম্পতি। মুনিয়াকে তাদের অর্থলোভি মানসিকতায় নির্মম বলি হতে হয়েছে। কলেজছাত্রী হলেও ছোট বোনকে লাখ টাকা দিয়ে বাসা ভাড় নিয়ে দেন রহস্যজনক কারণে। তাদের কারণেই বখে গেছেন মুনিয়া। সাংবাদিক সম্মেলনে মুনিয়ার বখে যাওয়ার কথা নিজ মুখেই স্বীকারোক্তি দেন নুসরাত জাহান। বলেন, ও (মুনিয়া) বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল, সে আমার অবাধ্য হয়ে গিয়েছিল, আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি মুনিয়ার জিদের কাছে পরাজিত ছিলাম। প্রশ্ন উঠেছে বড় বোনের বিলাসী জীবন যাপন নিয়েও।