রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিল পুলিশ। এরপর সন্ধ্যায় মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পঠায় তারা। সবশেষে ওইদিন গভীর রাতে মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের একটি বৃহৎ শিল্পীগোষ্ঠীর এমডির বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে মামলা নেয় পুলিশ। বর্তমানে মামলাটির তদন্তের কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে। কিন্তু পুলিশের তদন্তে যখন একে একে বেড়িয়ে আসছে মাদকসক্ত মুনিয়ার বেপরোয়া জীবনের বিভিন্ন কাহিনী, মিলছে ঘটনার সঙ্গে হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের সম্পৃক্ততা- ঠিক তখনই পুলিশকে দোষারোপ শুরু করেছেন নুসরাত। আইনানুযায়ী সবকিছু করার পরও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এই ঘটনায় ‘যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর’ প্রবাদটিই যেন সত্য হলো পুলিশের ক্ষেত্রে। খোদ মামলার বাদী নুসরাত জাহানই চোর বানালেন পুলিশকে।
মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বুধবার (২৬ মে) সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ড নামের একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে একপর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই প্রেসক্লাব ত্যাগের চেষ্টা করেন নুসরাত। পরে প্রেসক্লাব ভবনের নিচে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরেন। এসময় নুসরাত জাহান পুলিশকে বিতর্কিত করতে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলে, পুলিশের বর্তমান আচরণে মামলার সঠিক তদন্ত নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছি আমরা।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই পূর্বপরিচিত জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের অর্থায়নে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নুসরাত জাহান। ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নাম লিখা থাকলেও এতে অংশগ্রহণ করেন বহিরাগতরা। এসময় তাদের অনেকেই পুলিশ ও সাংবাদিকদে গালিগালাজ করেন।
এদিকে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ অভিযোগ করেছেন, তাকে না জানিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন নুসরাত। শারুনকে বাঁচাতে নিজের ছোট বোনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে সে। মুনিয়া বেঁচে থাকতে কোনো খোঁজ নেয়নি, অথচ মারা যাওয়ার পর দরদ উথলে উঠেছে নুসরাতের। এখন টাকার লোভে শারুনের কথায় সবকিছু করছে সে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রি গুলশানের ভাড়া বাসায় মোসারাত জাহান মুনিয়া (২১) নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে গুলশান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। ওই মামলার কয়েক দিন পর গত ২ মে মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে আরেকটি মামলার আবেদন করেন মুনিয়ার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ। দু’টি মামলাই সামনে রেখে তদন্তকাজ এগিয়ে নিচ্ছে পুলিশ।