বিশেষ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় শুরু হওয়া ‘প্রথম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অর্থ সম্মেলন’ (সিভিএফ)–এর উদ্বোধন করলেন বৃহস্পতিবার ।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক নের্তৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত জনগণের ঝুঁকিপূর্ণ জীবন, অভিন্ন আশা–আকাঙ্ক্ষা, প্রযুক্তি বিনিময় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। তিনিই এই ফোরামের সভাপতি। অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ আয়োজিত এই প্রথমবারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি দেশের (ভি-২০) অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং উন্নত দেশগুলোর উচিত তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব এবং নৈতিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা পালন করা। চলমান ও ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সহযোগিতা বাড়াতে হবে।’
সিভিএফ দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের চেয়ার বান কি মুন, ভি–২০ দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা, জি৭ভুক্ত ও জি–২০ভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা, আইএফআইএস ও এমডিবিএসের প্রধানরা এবং অংশীদারেরা সম্মেলনে অংশ নেন।
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেন, সিভিএফ-ভি–২০ গ্রুপের ৪৮ সদস্যরাষ্ট্র বৈশ্বিক নিঃসরণের মাত্র ৫ শতাংশের জন্য দায়ী। অথচ তারাই এই মানবসৃষ্ট দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্থ করার মাধ্যমে চলমান কোভিড-১৯ মহামারি নতুন আরও দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
সিভিএফ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রথম প্রস্তাবটি হলো, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধে প্রতিটি দেশকে উচ্চাকাংক্ষী লক্ষ্য অনুসরণ করতে হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাব, উন্নত দেশগুলোকে সিভিএফ-ভি–২০ দেশের সবুজ পুনরুদ্ধারের সুযোগ সৃষ্টি এবং মূলধনের ব্যয় হ্রাসে অব্যাহত সমর্থন এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, তহবিলের প্রবাহ অবশ্যই অনুমানযোগ্য, ভারসাম্যপূর্ণ, উদ্ভাবনী এবং বর্ধনশীল হতে হবে। উন্নয়ন অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো তহবিল বরাদ্দ এবং বিতরণে ব্যবহারকারী-বান্ধব প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে এবং বিভিন্ন জলবায়ু তহবিলের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
স্মার্ট ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম ভর্তুকি প্রবর্তনে আর্থিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে তিনি তাঁর চতুর্থ প্রস্তাবে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলবায়ু রক্ষায় ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই বিদ্যমান অর্থনৈতিক দূরত্ব ঘুচিয়ে সিভিএফ-ভি২০ দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘চ’ড়ান্তভাবে প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশকে আমাদের মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানের মতো একটি ‘জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ গ্রহণের কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে পারে।’
বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী তার ভাষনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছর দেশব্যাপী প্রায় তিন কোটি চারাগাছ রোপণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকার একটি নিরাপদ, সুরক্ষিত, জলবায়ু পরিবর্তনসহনশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ‘বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০’ প্রণয়ন করেছে।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু সমৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক সমাধান বের করতে সব অর্থমন্ত্রী, উন্নয়ন অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে ভ’মিকা রাখতে হবে। প্রতিবছর আমরা আমাদের জিডিপির প্রায় আড়াই শতাংশ বা প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই জলবায়ুসহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করি।’
তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে তাঁর সরকার ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ২৩টি পুনরুদ্ধার প্যাকেজ চালু করেছে। এটা জিডিপির আনুমানিক ৪ দশমিক ২ শতাংশ।