জন্মের ঠিক ১২দিন পরেই মাকে হারায় আবদুল্লাহ। জীবদ্দশায় মা গুরুতর অসুস্থ থাকায় গর্ভধারিণীকে হাসাপাতালের শয্যায় কাছে পেয়েও মাতৃত্বের সুধা পান করতে পারেনি শিশুটি। শুধু তাই নয়, মায়ের মৃত্যুর পর দেখতে সুন্দর ও ফুটফুটে আবদুল্লাহ’র ভাগ্যে তাচ্ছিল্য ছাড়া যত্মে বেড়ে উঠার সৌভাগ্যও হয়নি।
দরিদ্র পরিবারের ভ্যানচালক বাবা তার স্ত্রীকে হারিয়ে যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তখন মুখে তুলে খাওয়ানোর মতো পাশে ছিল না তেমন কেউ। আর মমতায় আগলে রাখা একমাত্র বোনটিও বিয়ের পর অন্যত্র স্বামীর ঘরে চলে যান। ফলে অযত্মে ও অবহেলায় বেড়ে ওঠা তিন বছরের আবদুল্লাহ আজ রোগাক্রান্ত হয়ে দিন-রাত পরে থাকছে বিছানায়।
উপজেলার টিয়াখালী ইউপির নাচনাপাড়া বঙ্গবন্ধু কলোনির বাসিন্দা আবদুল রউব। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। স্ত্রী তাছলিমা ও একমাত্র কন্যা জান্নাতুলকে নিয়ে সুখেই দিন পার করছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎই তার স্ত্রী দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপরই সুখের সংসারে নেমে আসে দুঃখ দুর্দশার খড়গ। আর আবদুল্লাহকে গর্ভে রেখেই হাসপাতালে শয্যাশায়ী হন তিনি। দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আবদুল্লাহ’র জন্মের ১২ দিন পর চির নিদ্রায় শায়িত হন।
আবদুল রউবের ভাষ্যমতে, তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর নতুন করে তার পুত্র সন্তানকে নিয়ে দুঃসংবাদ দেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি জানান, চিকিৎসক নবজাতক আবদুল্লাহও কঠিন রোগে আক্রান্ত। তখন থেকে ঐ হাসপাতালেই দীর্ঘদিন চলে তার চিকিৎসা। পরে সর্বস্ব বিক্রি করেও চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন কলোনির ঝুপড়ি ঘরে।
এরপর শিশুটি বেড়ে উঠলেও তিন বছর বয়সেও দাঁড়ানো তো দূরের কথা ঘুরেও শুতে পারছে না। আবদুল্লাহ’র বাবা আরো জানান, দিনভর কঠোর পরিশ্রম শেষে ঘরে ফিরে তরল খাবার তৈরি করে খাওয়াতে হয় তাকে। দিনের অধিকাংশ সময় পুত্রকে কোলে রেখেই কাটাতে হয়। তবে বর্তমানে আবদুল্লাহ’র শ্বাসকষ্টসহ নানান উপসর্গ থাকলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. চিনময় হালদার জানান, শিশুটি জন্মগতভাবেই রোগাক্রান্ত। তবে তাকে দেশে অথবা বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হলে স্বাভাবিক সুস্থতা ফিরে পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অলিউল ইসলাম জানান, আমাদের সমাজসেবা পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা হবে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ভুক্তভোগী পরিবারকে লিখিতভাবে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে আবেদন দেওয়ার কথা জানান তিনি।