বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৫:২৮ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

কে এই সাইফুল?

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩
  • ৯৪ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছেই কার্যত ‘দুষ্টু’ ও ‘প্রতারক’ বলে পরিচিত সাইফুল চক্র আবারও দেশের পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করার বহুমুখী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াত চক্রকে রাজনৈতিক সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার কোনো দুরভিসন্ধি এই চক্রের আছে কি না সেই তুলছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এমন প্রেক্ষাপটে শেয়ার কারসাজিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিএনপির প্রয়াত মন্ত্রী হারুনার রশিদ খান মুন্নুর পরিবারের অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাইফুলের সঙ্গে পুঁজিবাজারের অন্যতম রাঘববোয়াল ও বিভিন্ন সময় শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতাখ্যাত বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালু ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার লুৎফুর রহমান বাদলের সঙ্গে সাইফুল ইসলামের গোপন যোগাযোগের কথাও মাঝে-মধ্যে শোনা যায়। এসব বিষয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট সবারই জানা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কৃত্রিমভাবে দর কারসাজি করে ক্রেতা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে কমিশন খাওয়ায় সিদ্ধহস্ত সাইফুল ইসলাম ইতোমধ্যে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার সহায়-সম্পদের পরিমাণ শুনলে যে কারও চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
সামান্য একজন ট্রেডার থেকে কিভাবে সাইফুল ইসলাম বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেন তার ছায়া তদন্ত চলছে বলে সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, দেশের পুঁজিবাজারে যখন সুবাতাস বইতে শুরু করেছে তখন এই সাইফুল চক্র একাধিক কোম্পানির শেয়ারমূল্য কারসাজি করে ক্রেতাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, বিডি অটোকার, মীর আক্তার লিমিটেড, মেট্রো স্পিনিংসহ বিভিন্ন শেয়ারের দর কারসাজিতে সাইফুল চক্র প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কাজ করছে।
বিএসইসি সূত্রগুলো বলছে, প্রিমিয়ার ব্যাংক ব্রোকারেজ হাউজের বরখাস্তকৃত সিইও সাইফুল ইসলাম নিত্যনতুন কৌশলে শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় আছেন।
২০১৮ সালের লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও বিডি অটোকার কোম্পানির শেয়ারদর কারসাজি করায় ভিন্ন ভিন্ন চারটি চক্রকে সমন্বয় করেছিলেন তৎকালীন কমার্স ব্যাংক ব্রোকারেজ হাউজে কর্মরত সাইফুল ইসলাম।
ওই সময়ে একই চক্র আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, মুন্নু সিরামিক, মুন্নু শেয়ারের দরে ব্যাপক কারসাজি করে, যা বিএসইসির তদন্তে প্রমাণিত হয়। সাইফুল ইসলাম ও তার ঘনিষ্ঠদের ওই সময় বিএসইসি মোটা অঙ্কের জরিমানাও করে।
জানা যায়, সাইফুল পুঁজিবাজারের ‘দুষ্টু ক্ষত’—এটি বুঝতে পেরে প্রিমিয়ার ব্যাংক ব্রোকারেজ হাউজ থেকে একপর্যায়ে তাকে বরখাস্তও করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, ততদিনে মানুষকে ধাপ্পাবাজি দিয়ে হাজার কোটি টাকা নিজের পকেটে ঢুকানো সম্পন্ন হয় সাইফুলের।
সূত্রগুলো বলছে, রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় বাড়ি করে বসবাস করেন সাইফুল। এই উত্তরাতেই তার অন্তত দশটি বাড়ি আছে। উত্তরা রূপায়ণ সিটিতে ১৮ কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক তিনটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও কিনেছেন তিনি। এমনকি একই রূপায়ণ সিটিতে নির্মিতব্য মার্কেটে প্রায় অর্ধশত দোকান কিনেছেন সাইফুল।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, দুবাইয়ে রিয়েল এস্টেট খাতেও যেমন তার বিনিয়োগ রয়েছে, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে সাইফুলের। নিজের নামে ও অন্য নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার বাড়ি কেনার কথাও শোনা যায়।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ব্রোকারেজ হাউজে একজন ট্রেডার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা সাইফুল অভিনব প্রদ্ধতিতে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সিদ্ধহস্ত। কৌশলে সে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয় শেয়ারদর বাড়িয়ে দিয়ে কোম্পানির মূলধন মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধিতে সে সহযোগিতা করবে। এরপর মালিকপক্ষের বেনামে থাকা শেয়ার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করবে। এইভাবে মালিকপক্ষ থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন আদায় করে নেয় সাইফুল।
অন্যদিকে ক্রেতাদেরকে সাইফুল ও তার চক্রের সদস্যরা এমনভাবে কৌশলী মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বোঝাতে সক্ষম হয় তার পরামর্শে শেয়ার কিনলে কয়েকগুণ মুনাফা পাওয়া যাবে। অনেক ক্রেতাই বেশি লাভের আশায় সাইফুলের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে শেয়ার কেনেন। প্রথম প্রথম একটু লাভও পায় তারা। বিনিময়ে ওই ক্রেতার থেকেও সাইফুল কমিশন আদায় করে ছাড়ে। একাধিক সূত্র বলছে, শুধু এই কারণেই সাইফুলের বৈধ আয়ের সঙ্গে তার সহায়-সম্পদের অনেক অসংগতি পাওয়া যায়।
আশঙ্কার কথা হলো, সাইফুলের সঙ্গে ফালু ও বাদলের যোগাযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। এটি সত্য হলে সাইফুল চক্রের মাধ্যমে বিএনপি ঘরানার অনেকেই লাভবান যেমন হতে পারেন। তেমনি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে নানা অপচেষ্টাও করতে পারে৷ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই শুরু হয়েছে গোয়েন্দা তদন্ত।
সাইফুল চক্র পার পেয়ে যাবে নাকি এবার শায়েস্তা হবে তা সময়ই বলে দেবে। এমনটিই মনে করেন পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
তবে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আলাপকালে বলেন, ‘শেয়ার কারসাজির শাস্তি অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত। কারসাজির দায়ে জরিমানাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দোষী অবশ্যই প্রমাণিত। এ বিষয়ে অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদকও আইনানুগ যা যা করার তা করবে।’
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘লঘু শাস্তি নয়, শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।’
বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম আলাপকালে বলেন, ‘শেয়ার কারাসাজিতে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আমরা সেসব ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখছি। নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com