নিজস্ব প্রতিবেদক :৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দীর্ঘ অপশাসনের সমাপ্তি ঘটে। তারুণ্যের হাত ধরে নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দেশবাসী। তবে নতুন এই যাত্রায়ও পড়ছে পুরনো কালো থাবা। শুরু হয়েছে মাদকের মতো নানা তরুণ ও যুবসমাজ বিধ্বংসী আগ্রাসন। সেই সাথে চলছে চাঁদাবাজিও। খোদ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে এমন চিত্র। এরমধ্যে নতুনভাবে মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে জাহির হয়ে উঠেছে যাত্রাবাড়ী। অত্র থানার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা সংলগ্ন বাজারের পেছনের এলাকা, মধ্যপাড়া কাঁচা বাজারের মুরগীর গলি, চন্দনকোঠা, টানপাড়া, বিদ্যুৎ গলি এলাকায় মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এমনকি নিকটবর্তী গেন্ডারিয়া, ধুপখোলা, জুরাইন থেকেও কিশোর-তরুণরা মাদকের খোঁজে এসব এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মাদকের নিয়ন্ত্রণ করছেন মুশফিকুর রহমান ফাহিম নামে সাবেক এক যুবদল নেতা। গত ৫ আগস্টের পর নিজেকে যুবদলের নেতা দাবি করে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অথচ যুবদলের কোনো কমিটিই এখন যাত্রাবাড়ীতে নেই। কমিটি অনেক আগেই বিলুপ্ত করা হয়েছে। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি ফাহিম শুরু করেছেন চাঁদাবাজি ও ফুটপাত দখল বাণিজ্য। যাত্রাবাড়ী থানার সম্মুখে লেগুনা স্ট্যান্ড ও গাড়ি পার্কিংয়ের চাঁদাবাজি, দক্ষিণ অঞ্চলগামী সকল পরিবহনের কাউন্টার, থানার সম্মুখে লেগুনা স্ট্যান্ড ও গাড়ি পার্কিং থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটছে এখানে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার মাদকের গডফাদার হিসেবে দাপিয়ে বেড়ানো মুশফিকুর রহমান ফাহিম এক সময় যাত্রাবাড়ী থানার যুবদলের সহসভাপতি ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদকের ব্যবসা করেছেন। ৫ ই আগস্টের পর নতুনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের সময় মাদকের ব্যবসা পরোক্ষভাবে করলেও এখন তিনি সরাসরি স্পট খুলে প্রকাশ্যে ব্যবসা করছেন। নিজেকে আবারও যুবদলের নেতা পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি ও ফুটপাত দখল বাণিজ্য শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দলীয়ভাবেও তাকে শোকজ করা হয়েছে এসব ইস্যুতে। গত ২৩ অক্টোবর যুবদলের পক্ষ থেকে তাকে অফিসিয়ালি শোকজও করা হয়েছিল।
সারাদেশে বর্তমানে থানা ও পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ায় সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছেন ফাহিম। পাশাপাশি দলীয়ভাবে নিজেকে যুবদলের হর্তাকর্তা পরিচয় দিচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী, যারা চাঁদা তোলা ও মাদক বিক্রির সাথে সরাসরি জড়িত। ফাহিমের মাদক সাম্রাজ্যের অবস্থান মূলত বিদ্যুৎ গলি সড়ক, নিজ বাড়ির সামনে রিক্সার গ্যারেজ। এই স্পটটি ফালান নামে একজন ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এছাড়া মধ্যপাড়া কাঁচা বাজারের মুরগীর দোকানের উপরের (রউফ মার্কেটের ২য় তলায়) স্পটটি সামুর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। শুধু তাই নয় প্রকাশ্যে ও নীরবে চালাচ্ছেন চাঁদাবাজি। যাত্রাবাড়ী থানার সম্মুখে লেগুনা স্ট্যান্ড ও গাড়ি পার্কিয়ের চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রণ করেন ফাহিমের ছোট ভাই মুরগী সোহেল। ইলিশ পরিবহন কাউন্টারের পশ্চিম পাশে ফ্লাই ওভারের নিচে- লেগুনা স্ট্যান্ড ও গাড়ি পার্কিং এর চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে ফাহিমের আরেক ভাই শাহিন। এছাড়া যাত্রাবাড়ীর অধিকাংশ ফুট চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে যাত্রাবাড়ী বাজারে হাবু হত্যা মামলার আসামি কালা শাকিল। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থেকে দক্ষিণ অঞ্চলগামী সকল পরিবহনের কাউন্টারে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে ফাহিম বাহিনীর অন্যতম সদস্য সামু, জামাল, ইকবালসহ তার বাহিনীর লোকজন।
উল্লেখ্য, যাত্রাবাড়ী থেকে সদরঘাটগামী ও বাহাদুরশাহ পরিবহনের একচ্ছত্র চাঁদাবাজি করে। ইতিমধ্যে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে দেশীয় ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। লিলি নামে একজন ঐ অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়। এছাড়া বিগত সরকারের যুবলীগের একটি অংশের সঙ্গে মিলে বাজারের এক গরুব্যবসায়ীর ৩টি গরু ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং মুরগী ব্যবসায়ীর ৬০০ মুরগি ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেন ফাহিম।
শুধু তাই নয়, যাত্রাবাড়ী বাজারের ভিতর পঞ্চায়েতের বৈঠকখানা যা আওয়ামী সরকারের যুবলীগ দখল করেছিল। একই কায়দায় ৫ আগস্টের পর যুবদল নামধারী ফাহিমও ওই বৈঠকখানা দখল করেন। এছাড়া নিজেকে কেন্দ্রীয় যুবদলের শীর্ষ দুই নেতার আশীর্বাদপুষ্ট ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের শীর্ষ দুই নেতার রাইটহ্যান্ড হিসেবে জাহির করছেন ফাহিম।
সবমিলিয়ে অত্র এলাকায় নতুন করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন এই ফাহিম। এলাকাবাসীরা জানান, দ্রুত ফাহিমের মাদকের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে না দিলে অত্র এলাকার তরুণ সমাজ ধ্বংসের পথে যাবে।