নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর রায়পুরার অনুমোদনহীন একটি মাদ্রাসা থেকে এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় ১৬ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম লোচনপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নে এটি অবস্থিত।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) সমাপনী পরীক্ষার শেষ দিনেও অংশ নিয়েছে তারা। গত বছরও এ মাদ্রাসার নামে ৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
কেন্দ্র সচিব ও উত্তর বাখরনগর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওই মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা আমি জানি। ওই মাদ্রাসার নামে পরীক্ষা দিতে আসা ১৬ জনকে পরীক্ষার হলে দেখে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। তাদের বয়সেরও তারতম্য রয়েছে।’
লোচনপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফারুক মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় মাদ্রাসাটির অনুমোদন করানোর জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মো. জুনায়েদের সঙ্গে পরামর্শ করি। তিনি জানান, অনুমোদন পুনরায় নবায়ন করতে চাইলে অন্তত তিন বছরের পরীক্ষার ফল দেখাতে হবে। এজন্য আমি স্কুল থেকে ঝরেপড়া গ্রামের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে একত্রিত করে বাড়িতে তাদের ক্লাস নিয়েছি। পরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শাখাওয়াৎ এর মাধ্যমে এই ১৬ জনের ডিআর জমা দেই। এরপরই তাদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়। তবে গতবছর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯ জনের তথ্য অস্বীকার করেন ফারুক।
রায়পুরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মো. জুনায়েদ বলেন, ‘গতবছরও ওই মাদ্রাসার নামে ৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাই এবার আর প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতি আছে কিনা, তার খোঁজ নেওয়া হয়নি। আমরা তো শুধু পরীক্ষার ব্যবস্থা করি। বাকি সবকিছু মাদ্রাসা বোর্ডের বিষয়। তবে উপজেলার মাদ্রাসাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নারগিস সুলতানা জানান, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার রেজিস্ট্রেশন দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। সেখানে কি হয়েছে, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
পরীক্ষার্থীরারায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রায়পুরা উপজেলার সাতটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার মধ্যে লোচনপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার নাম নেই। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে ১৬ জন কীভাবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, বিষয়টি বোধগম্য নয়। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’
এ বছরের ১৬ পরীক্ষার্থী হলো- সাইদুল ইসলাম, শাহাদাৎ হোসেন, মাসুদ রানা, ইয়াদুল ইসলাম, ফরিদ মিয়া, নয়ন মিয়া, সজিব মিয়া, নাদিম মিয়া, সাইফুল মিয়া, নাদিম মিয়া, তানিয়া আক্তার, জান্নাতি আক্তার, মাহফুজা আক্তার, সাদিয়া আক্তার, তানিয়া আক্তার ও সাদিয়া আক্তার।
সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর লোচনপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাটি স্বীকৃতি পায়। পরে নানা কারণে ১৯৯৫ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এই বছরের মার্চ থেকে স্থানীয় ইমপেরিয়াল হাইস্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক ফারুক মিয়া (২৯) আগের নামেই প্রতিষ্ঠানটি চালুর চেষ্টা চালান। তার সঙ্গে যোগ দেন নূর উদ্দিন (৩৫), স্বপ্না আক্তার (৩৫) ও পলি আক্তার (২০)। তবে প্রতিষ্ঠাকালীন মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তি এখন আর মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত নেই।