শনিবার, ২২ জুন ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

স্থানীয় শ্রমবাজারে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের আধিপত্য বাড়ছে

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯
  • ২৮৫ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক, সিটিজেন নিউজ: কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় শ্রমবাজারে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের আধিপত্য বাড়ছে। শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির হারে স্থানীয়দের চেয়ে এগিয়ে রোহিঙ্গারা। এদের ৫৭ দশমিক ৮৬ শতাংশই শ্রমবাজারে যুক্ত। স্থানীয়দের মধ্যে এর হার ৫১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। নগদ টাকা আয়ের জন্য রোহিঙ্গারা নিজেরাই বিভিন্ন কাজ করছেন। কিন্তু তাদের মজুরি স্থানীয়দের তুলনায় কম।
তারপরও তারা স্থানীয়দের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করছেন। এ প্রেক্ষাপটে যদি ব্যাপকভাবে তাদের কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে স্থানীয় শ্রমবাজারে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। তাদের সার্বিক অবস্থা ভালো থাকলেও পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। তাছাড়া তাদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্যের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। রাজধানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (ইফ্রি) গবেষণায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। সেমিনারের একটি অধিবেশনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অন্য দেশ থেকে মানুষ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। কেননা এমনিতেই ঘনবসতি ও কলকারখানা স্থাপনহ নানা কারণে খালি জমির পরিমাণ খুবই কম।

তাই রোহিঙ্গাদের এদেশে অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত করা খুব কঠিন। তাছাড়া শুধু অর্থনৈতিকই নয়, রোহিঙ্গারা এদেশের সামাজিক ক্ষেত্রেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। কেননা আমাদের মাথাপিছু আয়ের তুলনায় সামজিক অর্জনগুলো অনেক ভালো। যেমন- নারীরা অনেক বেশি শিক্ষা গ্রহণ করছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার অনেক বেশি, শিশুমৃত্যুর হার কম।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের মধ্যে নারীশিক্ষা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার শূন্যের কোঠায় এবং শিশুমৃত্যুর হারও বেশি। ফলে আমাদের সামাজিক অর্জনগুলোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী সেমিনারে বিভিন্ন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রিচার্ড রাগান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইফ্রির গবেষক ড. পাওয়েল দোরোস, বিআইডিএসের গবেষক ড. বিনায়ক সেন ও ড. মোহাম্মদ ইউনুস। এছাড়া বিভিন্ন অধিবেশনে একাধিক গবেষক তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, এটা সবাই জানেন। যেহেতু এটি একটি অতিমানবিক বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতা ও মানবতাবোধে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা সবক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার পথ বেছে নিই। বিবাদ পছন্দ করি না। আমরা রোহিঙ্গাদের মেনে নিয়েছি। অতীতে আমরা অন্যায়ের শিকার হয়েছি।

ফলে চাই না আর কেউ সেরকম অন্যায়ের শিকার হয়ে কষ্ট পাক। ১২ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নেয়ায় আমাদের বাজেটের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। তারা এখানে যে কয়েকদিন আছে, আমরা চাই তারা ভালো থাকুক। গবেষণায় উঠে এসেছে রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসছে, সেগুলো চুরি-চামারি হচ্ছে না। বরং সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বণ্টন করা হচ্ছে। তবে শিশুদের পুষ্টির অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। এটা কারও কাম্যও হতে পারে না। আমরা গভীরভাবে বিষয়টি দেখব।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা সার্বিকভাবে বাংলাদেশে ভালো রয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের দেয়া সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল।
ড. মোহাম্মদ মঈনুল হকের উপস্থাপন করা অপর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় স্থানীয়দের ৯০ শতাংশের কোনো না কোনো আয়ের উৎস আছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে আয়ের উৎস আছে ৭৫ দশমিক ৭০ শতাংশের। কাজ করে অর্থ আয় করছেন ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ রোহিঙ্গা। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে অর্থ আয় করছেন প্রায় ৫ শতাংশ রোহিঙ্গা, প্রবাসী আয় বাবদ অর্থ পাচ্ছে ১২ শতাংশ রোহিঙ্গা। অন্যান্য খাতে অর্থ পাচ্ছে ৪৭ শতাংশ রোহিঙ্গা। দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে আশ্রয় নেয়া ২২ শতাংশ পরিবার। স্থানীয়দের ক্ষেত্রে এর হার ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। কেএএস মুর্শিদ বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপকভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে কক্সবাজার যেহেতু ছোট্ট একটি জায়গা, তাই স্থানীয় শ্রমবাজারে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সার্বিকভাবে রোহিঙ্গাদের পুষ্টির অবস্থা একটু খারাপ। কেননা তাদের তো নির্দিষ্ট কিছু আইটেমের খাবার সরবরাহ করা হয়। তাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না। ফলে তারা নিজেরা বেশি কিছু কিনে খেতে পারেন না। শিশু পুষ্টির অবস্থা অতটা খারাপ বলা যায় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের তুলনায় কিছুটা খারাপ হলেও রংপুর বা কুড়িগ্রামের তুলনায় পুষ্টির অবস্থা ভালো বলা যায়। তিনি বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গাদের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ক্যালরি গ্রহণের অবস্থা অতটা খারাপ নয়। দারিদ্র্যের অবস্থাও অতটা খারাপ নয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা পরিবারগুলো মাথাপিছু প্রতিমাসে ১ হাজার ৫৮৯ টাকা থেকে ১ হাজার ৮১৮ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে। স্থানীয়দের মাথাপিছু মাসিক ব্যয় ২ হাজার ৪৫৫ টাকা। রেহিঙ্গাদের ব্যয়ের ৬৯ শতাংশই যাচ্ছে খাদ্য খাতে। আশ্রয় নেয়া ৯১ শতাংশ রোহিঙ্গা খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে। ১৫ শতাংশ রোহিঙ্গা সহায়তার এ খাবার বিক্রি করে দেয়। অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে খাদ্য বিনিময় করে ১২ শতাংশ রোহিঙ্গা। তারপরও জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি পাচ্ছেন। তাদের ক্যালরির অর্ধেক আসছে ভাত, অন্যান্য শস্য ও ডাল থেকে। ভাত, ডাল ও তেল যোগ করে তারা পাচ্ছে ৪৮৫ শতাংশ ক্যালরি। প্রাণীজ উৎস থেকে ৫ শতাংশ এবং ফল থেকে পাচ্ছে মাত্র ৩ শতাংশ ক্যালরি। এছাড়া জ্বালানি ও আলো পেতে তারা ৩২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করছে। প্রতি মাসে প্রায় ৮০ টাকা করে পোশাক ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে থাকে।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ১২ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। গর্ভবতীদের মধ্যে অপুষ্টির হার ২৩ শতাংশ। তারা কম ওজনের শিশু জন্মদানের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com