রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::
পিরোজপুরে তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জিয়াউল গাজী সহ ১০ প্রার্থীর মনোয়নপত্র দাখিল উত্তরায় ট্রাফিক পুলিশের মাঝে ওরস্যালাইন বিতরণ। পাঁচশত টাকায় স্ত্রীকে বন্ধ, গনধর্ষনের স্বীকার স্ত্রী,স্বামী সহ আটক-৪ বিদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিধিনিষেধ তুলে দিলো কুয়েত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজলের জয়জয়কার গাজীপুরে জব্দ করা অবৈধ চিনি পেল এতিমরা বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার (২০ এপ্রিল) আইপিএলের মাঝে দল ছেড়ে ‘পালালেন’ অশ্বিন, পাওয়া গেল জঙ্গলে! প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস, আগামী দুদিন যেমন যাবে আবহাওয়া দক্ষিনখানে ১৪ বছরের রায়হানকে হত্যাচেষ্ঠা,মামলার ১৩ দিনেও গ্রেফতার হয়নি আসামী

সন্ধ্যা হলেই মসজিদটির পাশে যেত না কেউ

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪
  • ৬ বার পঠিত

স্ত্রী মমতাজের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তাজমহল গড়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। তৎকালীন রাখাইন জমিদারের আদরের কন্যা মাথিন ও বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজের প্রেমগাঁথা হয়ে আছে কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফে অবস্থিত ‘মাথিনের কূপ’।

শুধু তাজমহল কিংবা মাথিনের কূপ নয়, রয়েছে এমন আরো অনেক প্রেমের নিদর্শন। এসবের মধ্যে এক ব্যতিক্রমী নিদর্শন চট্টগ্রামের আনোয়ারার ঐতিহাসিক ছুরুত বিবি মসজিদ। উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা গ্রামে অবস্থিত সতেরশ’ শতকের এ মসজিদ ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি।

আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৫৭৫ সালে দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে গৌড় রাজ্য ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলে রাজ্য ত্যাগ করে তৎকালীন দেয়াঙ রাজ্যের অন্তর্গত শোলকাটা গ্রামে সপরিবারে বসতি স্থাপন করেন গৌড় রাজ্যের সেনাপতি শেখ মোহাম্মদ আদম। এ বংশের একজন জমিদার ছিলেন শেখ আমির মুহাম্মদ চৌধুরী। ১০৫১ মঘী সনের এক ‘একরারনামা’ মূলে জানা যায়- আমীর মুহাম্মদ চৌধুরীর ওপর জমিদারির ভার ছিল।

ঐতিহাসিক ছুরুত বিবি মসজিদইতিহাস গবেষক জামাল উদ্দিনের ‘দেয়াঙ পরগনার ইতিহাস’ গ্রন্থ মতে, আরাকান রাজসভার মহাকবি আলাওলের দুই কন্যা। এরমধ্যে দ্বিতীয় কন্যা ছুরুত বিবি ওরফে শুক্কুর বিবিকে বিয়ে করেছিলেন দেয়াঙ পরগনার মুঘল অংশের দেওয়ান পরিবারের এক জমিদার বাড়ির ছেলে দেওয়ান আমির মোহাম্মদ চৌধুরী। বিয়ের পর স্ত্রীর নামেই এ মসজিদটি নির্মাণ করেন আমীর মুহাম্মদ চৌধুরী।

ধারণা করা হয়, মুঘল শাসনামলে (১৭১৩-১৭১৮) মসজিদটি নির্মিত হয়। প্রাচীন এ মসজিদ নিয়ে নানা কথা প্রচলিত রয়েছে সমাজে। এক সময় মসজিদটিতে নামাজ পড়তেন না কেউ। তাদের ধারণা ছিল-জিনেরা এ মসজিদে নামাজ পড়ে। তাই ভয়ে কেউ নামাজ পড়তেন না। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম মসজিদটিতে নামাজ আদায় করেন আনোয়ারা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা ইদ্রিছ আহমদ।

অনেকের মতে, এ মসজিদে মানত করলে পূরণ হয় মনের আশা। তাই প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে মসজিদটিতে ছুটে আসেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ।

বংশ পরম্পরায় মসজিদটির পঞ্চম মোতাওয়াল্লি স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম। তিনি জানান, এক সময় এ মসজিদে শুধু জোহর আর আসরের নামাজই পড়তেন মানুষ। জিনেরা এখানে নামাজ পড়তো বলে জনশ্রুতি ছিল, ফলে সন্ধ্যা হলে ভয়ে আসতেন না কেউ। ১৯৯০ সালের পর থেকে এখানে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন স্থানীয়রা।

ঐতিহাসিক ছুরুত বিবি মসজিদমসজিদটির স্থাপত্যশৈলীতে রয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম শিল্পধারা। তিনটি ছোট-বড় গম্বুজ আর ৩০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি মিনার। খিলান, আর সু-উচ্চ মিনার বাড়িয়ে দিয়েছে মসজিদটির নান্দনিকতা। একসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এ মসজিদে। মসজিদের দক্ষিণ ও পশ্চিমে রয়েছে বিশাল দুটি দীঘি। দক্ষিণের দীঘিটি ‘ছুরুত বিবি দীঘি’ আর পশ্চিমের দীঘিটি ‘আমীর খাঁ দীঘি’ নামে পরিচিত। মসজিদের দক্ষিণ পাশে সারি সারি করে রয়েছে ১২টি কবর। কবরগুলো ছুরুত বিবির পরিবারের সদস্যদের, যাদের হত্যা করেছিলেন মনু মিয়া।

জানা যায়, ছুরত বিবির বিয়ের বছর দেড়েক পর তার ঘর আলো করে আসে দুই সন্তান জাফর খাঁ আর মুজাফফর খাঁ। ছেলেরা একটু বড় হতেই মুঘল সম্রাট তাদের ডেকে নেন দিল্লীতে। হাজার লোক দিল্লীর রাজপথে দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়ে তাদের নিয়ে যায় রাজপ্রাসাদে। সেখানে মুঘলদের পক্ষ থেকে দুজনকে নবাবী সনদ দেওয়া হয়।

আনোয়ারার আরেকজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়া। ছুরুত বিবির দুই সন্তানের নবাবী সনদ পাওয়া মেনে নিতে পারেননি তিনি। ফলে তাদের জমিদারি পরিচালনায় প্রকাশ্যে ও গোপনে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকেন মনু মিয়া।

ঐতিহাসিক ছুরুত বিবি মসজিদঅন্যদিকে, নবীন দুই জমিদারের পক্ষে মনু মিয়ার এসব অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদ করার মতো সাধ্য ছিল না। কারণ- সে সময় মনু মিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী আরেক জমিদার নবাব ইয়াছিন খান।

কথিত আছে, ইয়াছিন খানের সহযোগিতায় ছুরুত বিবির দুই সন্তান জাফর খাঁ ও মোজাফফর খাঁ’কে ধরে নিয়ে যান মনু মিয়া। এরপর তারা আর কখনো ফিরে আসেননি। ঘটনার বেশ কিছুদিন পর চট্টগ্রাম নগরীর কাটা পাহাড় থেকে দুই ভাইয়ের খণ্ডিত মস্তক উদ্ধার করা হয়।

পরবর্তী সময়ে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আক্রোশে ফেটে পড়ে দেওয়ান পরিবার। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে দেওয়ান পরিবারের আরো ১৬ সদস্যকে তরবারি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে হত্যা করেন মনু মিয়া। সেই ষোল হত্যাকাণ্ড থেকেই শোলকাটা গ্রামের নামের উৎপত্তি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com