মাসুদ পারভেজ (উত্তরা) রাজধানীর প্রবেশপথ বৃহত্তর উত্তরা মডেলটাউন পুরো এলাকাটি রয়েছে ছিনতাইকারীদের দখলে। ছিনতাইকারীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উত্তরাবাসী।তাদের হাতে জিম্মি এখানকার পথচারীরা।
প্রশাসনের অব্যাহত অভিযানে একদিকে গ্রেফতার হচ্ছে, অন্যদিকে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে আবারো একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারী চক্রের হাতে নিঃস্ব সাধারণ মানুষ। তাদের এহেন কর্মে জনমনে আতংক সৃষ্টির ফলে এখানকার মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ভয় আতংকে
বিঘ্নিত হচ্ছে এখানকার মানুষের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম।
উত্তর পশ্চিম থানা পুলিশ গতকাল ২৪/০২/২০২৫ ইং তারিখ সোমবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে ১৩ জন ছিনতাইকারীকে আটক করে। এ সময় তাদের নিকট থেকে দুইটি চাপাতি একটি চাকু দুটি রড ও একটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল সোমবার
২৪/০২/২০২৫ ইং তারিখ রাতে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ১০ জন ছিনতাইকারী ও ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়া ৫ জনসহ সর্বমোট ১৫ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার কালে তাদের কাছ থেকে ১ টি লোহার সাবল,১ টি ধারালো ক্ষুর,২ টি লোহার রড,১ টি চাপাতি,
২ টি সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়।
রাজধানী উত্তরায় চুরি, ছিনতাই ও ডেভিলদের ধরতে উত্তরা ও তুরাগের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্প সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের টহল দল এবং পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী উত্তরা পশ্চিম এবং তুরাগের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে অভিধান পরিচালনা করে।
এ সময় সন্দেহভাজন ব্যক্তি, হেলমেট ও লাইসেন্স বিহীন মোটরসাইকেল আরোহী এবং প্রাইভেটকার তল্লাশি করে। হেলমেট এবং লাইসেন্স না থাকার কারণে সর্বমোট ১১টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দর মহাসড়কসহ উত্তরাজুড়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চেকপোস্ট বসানো হয়। সেখানে তারা সন্দেহজনক বিভিন্ন লোকজনে ব্যাগ ও ব্যক্তিগত পরিবহনে তল্লাশি চালায়।
প্রশাসনের এ উদ্যোগকে উত্তরার বিভিন্ন মহল স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন, এভাবে পুলিশ ও যৌথবাহিনির চেকপোস্ট চলতে থাকলে উত্তরা এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারীও চাঁদাবাজরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
কখনো বিকাশ এজেন্টকে কুপিয়ে খুন করে দোকান লুটপাট করা,কখনো প্রকাশ্যে পথচারীকে কুপিয়ে রক্তাত জখম করা,কখনো কখনো গণপরিবহনের যাত্রীদেরকে ধাঁরালো চাক্কু দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে লুটপাট, আবার কখনো কখনো শয়তানের নিঃস্বাসের মাধ্যমে সব কিছু ছিনিয়ে নেয়া, আবার কখনো বিভিন্ন অফিসে হুমকি দিয়ে নামে বে- নামে চাঁদাবাজি এসব বিষয় উত্তরাবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।
সম্প্রতি সড়কের অলিগলিতে চুরি-ছিনতাই ও খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাবাসীর মাঝে আতংক বিরাজ করছে। তারা পরিবারের সদস্য ও স্কুল কলেজে পড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
এ সময় সরকারী বেসরকারী চাকুরীজীবিরা বলছেন দেশটা যেমন মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। সড়কের ছিনতাইকারীদের হাত থেকে বাঁচতে তারা গণপরিবহন ব্যবহার করে ও রক্ষা পাচ্ছে না, এখন তারা কি করবে কোথায় যাবে, কি ভাবে অফিস আদালতে যাবে, এ সব বিষয়ে কার কাছে নালিশ জানাবে ভেবেই পাচ্ছে না।
উত্তরায় ছিনতাইকারীরা এতোটাই ভয়ংকর ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সড়কের অলি গলির পাশাপাশি এখন তারা দিনে দুপুরে গণপরিবহনের যাত্রীদের উপর হানা দেওয়া শুরু করেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন,ফ্যাসিস হাসিনার দোসর ১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের মিলন,১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান ও উত্তরা পশ্চিম থানার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা কিশোর গ্যাং লালন পালন কারী আলাউদ্দিন সোহেলের পালিত সন্রাসীরা এসব জঘন্য
কাজে জড়িত।
তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফায়দা নিতে এমন ঘৃণীত কাজে লিপ্ত হচ্ছে।
গত(১৯ ফেব্রুয়ারি) বুধবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় ভিক্টর পরিবহণ নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
ভক্তভুগি সুত্রে জানা যায় ঐ দিন বাসটিতে ৫-৬ জন যুবক সাধারণ যাত্রীর মতো উঠে। এরপর হঠাৎ এদের মধ্যে ৩ জন ধারালো ছুরি বের করে চিৎকার করে বলে, সবাই চুপ, যা যা আছে বের করে দে। এ সময় ছিনতাইকারীরা এক যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে বাসে আতংকের সৃষ্টি করে
মুহূর্তের মধ্যেই তারা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, ওয়ালেটসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।
উত্তরায় হঠাৎ ছিনতাই ও খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায়
কেউ কেউ বলছেন,নেশার টাকা জোগার করতেই বখাটে
তরুণরা চুরি ছিনতাই ও খুনের মতো জঘন্যতম অপরাধ করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি
রাজধানীর দক্ষিণখানে প্রকাশ্য দিবালোকে দোকানে লুটপাট করতে গিয়ে বিকাশ এজেন্ট সুমন কুমার পালকে খুন করে দূর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সেতু রানী পাল বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি দক্ষিণখান থানায়
হত্যা মামলা করেন। বিকাশ এজেন্টকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা আব্দুল করিম (৪৫) নামক এক জনকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করে।
অপরদিকে বিমানবন্দর থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত ২০/০২/২০২৫ ইং তারিখ বিমানবন্দর গোল চত্বর, পার্কিং এরিয়া, ছাপরা মসজিদ, রেল স্টেশন, কাওলা সহ অন্যান্য এলাকা হইতে বিদেশ গামী বিভিন্ন যাত্রী ও পথচারীদের নিকট হইতে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টা কালে ০৬ জন পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেন।
এরা হলো ইসমাইল হোসেন (৩২), পিতা-মৃত আসাদ মিয়া, সাইদুল ইসলাম (৩২) পিতা আব্দুল মজিদ, আরিফ হোসেন (২৩), পিতা: আলমগীর, শামীম হোসেন (১৮), পিতা: কাদের , জনি মোল্লা (৩২), পিতা: অলি মোল্লা , রানা (২১, পিতা: কামাল। গ্রেফতারকৃতদের ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশন এর বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (ক্যাব কোটে) প্রেরণ করিলে, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শুনানি অন্তে ধৃত আসামী ১। ইসমাইল হোসেন (৩২) কে ১৫ দিনের কারাদণ্ড ২। সাইদুল ইসলাম (৩২) কে ০৭ দিনের কারাদণ্ড,৩। আরিফ হোসেন (২৩) কে ০৭ দিনের কারাদণ্ড, ৪। শামীম হোসেন (১৮) কে ০১ মাসের কারাদণ্ড, ৫। জনি মোল্লা (৩২) কে ১৫ দিনের কারাদণ্ড, ৬। রানা (২১) কে ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
গত ১৯ শে ফেব্রুয়ারী বিমানবন্দর থানা পুলিশ আসাদ শেখ নামের এক পেশাদার ছিনতাইকারীকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেন।
উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) রাত আনুমানিক ০৯.১৫ ঘটিকায় উত্তরা ০৭ নং সেক্টরের ০৯ নং রোডের বাসা নং-১০ এর সামনে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এক দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে এমন সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক প্রচার হলে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের টহল টিম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পথচারীদের সহায়তায় ঘটনায় জড়িত মোঃ মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেফতার করে।
এ ঘটনায় ভিকটিম নাসরিন আক্তার ইপ্তি বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা চক্রের সাথে জড়িত পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করে।
এ ছাড়াও গত কয়েকদিন আগে তুরাগের কামারপারা পুরান বাজার এলাকায় শয়তানের নিশ্বাস দিয়ে অচেতন করে মহল্লার গলিতে নিয়ে চেতনানাশক দ্রব্যের মাধ্যমে অচেতন করে গলায় ও কানে থাকা দেড় ভরি ওজনের সোনার চেইন,দুটি কানের দুল, ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা নগদ টাকা ও মুঠোফোন নিয়ে চলে যায় একটি চক্রটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর মহাসড়ক কাওলা-জসিম উদ্দিন, উত্তরা আজমপুর বিএনএস সেন্টার, উত্তরা হাইস্কুল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল,দিয়াবাড়ী ১৮ নং সেক্টর, আব্দুল্লাহপুর চৌরাস্তা,আইসি হাসপাতাল ঘাট রেললাইন ও কামারপারা এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের উৎপাতে রাতের বেলায় এ সব সড়ক ভয়ংকর হয়ে উঠে।
স্থানীয়দের দাবি সাধারন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সব সড়কে পুলিশের টহল বাড়ানো দরকার, পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি পুলিশ চেকপোস্ট পরিচালনা খুবই জরুরি।
উত্তরার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয় জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের এডিসি আহম্মদ আলী প্রতিবেদককে বলেন, এগুলো কি উত্তরার ঘটনা! এ সময় তিনি ছুটিতে আছেন বলেন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান।