বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৭ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

সিকদার লিটনের সঙ্গে মামলাবাজ তৃপ্তির কীসের সখ্য?

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৩ বার পঠিত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশিষ্ট এক ব্যক্তিকে চরিত্রহননের মাধ্যমে ঘায়েল করার হীন চক্রান্তে কথিত ধর্ষণের মামলার আবেদন ঠুকে দেওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। তৃপ্তি খানম (৩২) নামে এক নারী ঢাকার নারীশিশু একটি আদালতে মামলাটির আবেদন করেন। যেইখানে একজন বড় রকমের প্রতারক, বহু মামলার আসামী সিকদার লিটন ও তার স্ত্রীর নামও সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে কথিত বাদিনী তৃপ্তি খানম যেইদিনগুলোতে (১৫,১৬,১৭ জানুয়ারি) ঘটনাস্থল (পি ও) হিসেবে ঢাকার মীরপুরের কথা উল্লেখ করেছেন ওইদিনগুলোতে তিনি ছিলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় । মামলার আবেদনে তিনি নিজের মোবাইল নাম্বার হিসেবে যে বাংলালিংক নম্বরের উল্লেখ করেছেন তার সিডিআর পর্যালোচনায় এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে +880 19 7720 6463। এমনকী আলফাডাঙ্গার পদ্মা ডায়গনস্টিক সেন্টারে তৃপ্তি খানম ওইদিনগুলোতে ডিউটিরত ও ছিলেন, সেখানকার হাজিরা খাতায় তার সাক্ষরও আছে এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আরজিনা বেগমের সাথে কথা বলেও এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে ।
প্রাপ্ত কাগজপত্র, তথ্য-উপাত্ত, সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা ব্যক্তিদের বক্তব্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মামলা করে ধান্ধাবাজি করা এবং ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি চক্রের ভাড়াটে হয়ে কথিত ধর্ষণের অভিযোগ করেন ওই নারী।

তৃপ্তি খানমের অভিযোগে সাক্ষী হিসেবে নাম দেওয়া চারজনের মধ্যে এনামুল হাসান ও তবিবর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছে অনুসন্ধান টিম। আর সিকদার লিটন ও তার স্ত্রী কে পাওয়া যায়নি ।এছাড়াও অভিযোগকারী নারীর কর্মস্থলের কর্ণধারসহ একাধিক কর্মীর সঙ্গে আলাপেও ওই নারীর বিষয়ে ‘অত্যন্ত বাজে’ তথ্য মিলেছে।

সাক্ষীদের মধ্যে একজন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হাসান। তার দাবি এমন কোনো অভিযোগ সম্পর্কে তিনি জানেন না। এমনকি সাক্ষী হিসেবে কেন তার নাম দেওয়া হয়েছে সেটিও তিনি জানেন না।

গোপালপুর ইউনিয়নেরই আরেক বাসিন্দা তবিবুর রহমান। তাকেও সাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছেন অভিযোগকারী তৃপ্তি খানম। সাক্ষী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তবিবুর এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি শুনেছেন এমন একটি মামলার আবেদনে সাক্ষী হিসেবে তার নাম দেওয়া হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন অভিযোগকারী ওই নারীর সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই সম্পর্কিত নন।

অভিযোগে আরও সিকদার লিটন নামে একজন পুরুষ ও তার স্ত্রীকেও সাক্ষী দেখিয়েছেন তৃপ্তি খানম। তারাও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। অর্থাৎ তৃপ্তি খানমের দেখানো চারজন সাক্ষীই একই এলাকার।

এই চার সাক্ষীর মধ্যে সিকদার লিটনের বিষয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে রয়েছে প্রতারণা, জালিয়াতি, হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ডজনখানেক মামলা। এছাড়াও রয়েছে দুই ডজনের বেশি সাধারণ ডায়েরি (জিডি)।

ফরিদপুরের জেলা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, সিকদার লিটন একজন দাগী আসামী। ২০২০ সাল থেকে সে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সম্প্রতি সে কারামুক্ত হয়। এরপর থেকে সে মামলাবাণিজ্য করে সমাজের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি করছে। এমন কয়েকটি গুরুতর অভিযোগও জমা পড়েছে জেলা পুলিশের দপ্তরে।

অনুসন্ধানে চিহ্নিত প্রতারক সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে একে একে উঠে আসে পিলে চমকানো সব তথ্য। পুলিশের তথ্য বলছে, সিকদার লিটনের নামে ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জিডি রয়েছে দুই ডজনের বেশি।

দীর্ঘ কারাভোগের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে জামিনে বেরিয়ে আসে প্রতারক সিকদার লিটন। এরপর নতুন করে আবার শুরু করে মামলাবাণিজ্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাভেদ নামে এক আসামিকে হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে মামলার আবেদন করে সিকদার লিটন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিহত ওই বন্দির সঙ্গে প্রতারক লিটনের কোনো রকম সম্পর্ক নেই। এমনকি নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও তাকে মামলা করার বিষয়ে সম্মতি বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়নি। নিহত জাভেদের ভাই মাইনুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।

প্রশ্ন উঠেছে, এমন একজন চিহ্নিত প্রতারক কথিত ধর্ষণের অভিযোগে সাক্ষী হলো কিভাবে? সেই সূত্র খুঁজতে গিয়ে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগকারী নারী তৃপ্তির সঙ্গে প্রতারক লিটনের সম্পর্কই বা কীসের?

অনুসন্ধান বলছে, কারামুক্ত হয়েই ভোল বদলাতে শুরু করে প্রতারক লিটন। বিশিষ্টজনের সম্মানহানি করতে নানামুখী চক্রান্তে নেমেছে সে। এরই অংশ হিসেবে আরেক মামলাবাজ তৃপ্তির সঙ্গে দহরম মহরম শুরু তার। দুজনে মিলে কথিত মিথ্যা ধর্ষণের মামলা সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়। সেই অনুযায়ী তৃপ্তি মামলার আবেদন করে, যেখানে ৩ নম্বর সাক্ষী রাখা হয়েছে লিটনকে।

প্রতারক লিটন ও মামলাবাজ তৃপ্তির মোবাইলের কললিস্ট বিশ্লেষন করে তাদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্কেরও আভাস মিলেছে। শুধু গত ৫ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কললিস্ট যাচাই করে দেখা গেছে, সিকদার লিটন ও তৃপ্তির মধ্যে ৪৭ বার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে, যা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি।

এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা এগারোটা ৪২ মিনিটে সিকদার লিটনের সঙ্গে প্রথম কথা হয় তৃপ্তির। এসময় তারা কথা বলে ৯৯ সেকেন্ড। এর দুই মিনিট পর তৃপ্তির সঙ্গে পুনরায় কথা হয় সিকদার লিটনের। সেখানেও ৯৯ সেকেন্ড কথা বলে তারা ।

এছাড়া ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটা ৪২ মিনিটে এবং ৪৩ মিনিটে পৃথকভাবে ২৮ সেকেন্ড করে কথা হয় দুজনের। একইদিন ১২টা ৯ মিনিট, ১২টা ২০ মিনিট, ১২টা ৩৫ মিনিট এবং ১২টা ৩৮ মিনিটে তাদের যথাক্রমে ৩১, ৩৪, ১৯৬ এবং ১৯৫ সেকেন্ড কথা হয় তাদের। একই দিন বিকাল ৫টা ৪১ মিনিটে ৪৯৩ সেকেন্ড অর্থাৎ টানা আট মিনিটের বেশি কথোপকথন হয়।

পরের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ২৮ মিনিট, দশটা ৪৯ মিনিট, ১১টা ১৫ মিনিট এবং ১১টা ১৮ মিনিটে তাদের প্রায় ১২ মিনিট কথা হয়। এছাড়া বেলা সোয়া ১২টায় পৃথকভাবে দুবার কথা হয় তাদের।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতারক লিটন ও মামলাবাজ তৃপ্তি মিলে একটি চক্রের হয়ে কাজ করছে। তারা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানহানির পাশাপাশি গুরুতর মিথ্যা অভিযোগ এনে টাকার বিনিময়ে সমাধানের প্রস্তাব দিচ্ছে কৌশলে। এমনকি ডজনখানেক মামলায় চিহ্নিত আসামি হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে যোগাযোগেও বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছর শাসনামলের সময় নিজেকে দলটির দাবি করা প্রতারক লিটন এখন তার অপকর্ম ঢাকতে বিএনপির সমর্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তবে এলাকায় বাটপারি, প্রতারণা, জালিয়াতি, চাকরি দেওয়ার নামে অজস্র মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক লিটনের বিষয়ে সজাগ আলফাডাঙ্গাসহ ফরিদপুরের মানুষ।

এত অভিযোগ থাকার পর এমন দাগী আসামির ঘুরে বেড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফরিদপুরের সচেতন মহল। তারা বলছেন, পুলিশের খাতায় দাগী আসামী কিভাবে প্রকাশ্যে থাকে? তাদের প্রত্যাশা, এমন মতলববাজ ও মামলাবাজদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
###

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com