নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আহম্মেদ ফরহাদ খান তানিমের অব্যবহিত চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার সময় আগারগাঁও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মুন্জুরি কমিশন ইউজিসি’র আগারগাঁও ভবনের নিচতলায় ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির ল’ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে তারা ইউজিসির চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি জানিয়ে স্মারক লিপি প্রদান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বিক্রি, সরকারি অনুমোদন ছাড়া নিজেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে লুটপাট,
সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে হামলা,বিনা কারণে শোকজ ও ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকিসহ বিভিন্ন
হয়রানির অভিযোগ এনে আজ বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ব বিদ্যালয়ের
সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা ভুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়িয়ে দিয়ে ছাত্র সমাজকে
হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে এই তানিম। শিক্ষার্থীরা বলেন, পাঁচ টাকা দশ টাকা বেতন বাকি থাকলেও রেজাল্ট আটকিয়ে রাখেন।অসুস্থ হলেও কোন ধরনের ছাড় দেন না।
এ ঘটনায় ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও সন্ত্রাসী দখলদারিত্বের মধ্যে পড়ালেখা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের স্ব-ঘোষিত চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান তানিম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ইইবি’র দায়িত্ব গ্রহণ করে একাধারে দুর্নীতি, সম্পদ আত্মসাৎ, সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ সব বিষয় নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান শ্যামলীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কেনা জমি বিভিন্ন চল চাতুরীর মাধ্যমে নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। উন্নয়নের নামে ভুয়া বিল দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ভবনের মূল্যবান ইট, পাথর, লোহার তৈরি সামগ্রী রাতারাতি সরিয়ে তার নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে নিয়ে গেছেন।
শিক্ষার্থীরা
আরও ভয়াবহ অভিযোগ এনে বলেন,এই অবৈধ চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন দমন করতে শীর্ষ সন্ত্রাসী হত্যা মামলার আসামি ‘পটেটো রুবেল’-কে ব্যবহার করছেন। রুবেল ৮টি হত্যা মামলার আসামি, যার মধ্যে রয়েছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম হত্যা মামলাও।
র্যাব একসময় তাকে গ্রেপ্তার করলেও রহস্যজনকভাবে সে জামিনে বেরিয়ে আসে এবং এখন আবারো সক্রিয়ভাবে অপরাধে জড়িত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাকিব হাসান জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু আমাদের আন্দোলনে বিভ্রান্তি ছড়াতে কিছু শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করা হয়। পরে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এরপর আমাদের অনেককে শোকজ করে এবং ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়।”
আরেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “যখন আমি সত্য কথা বলতে শুরু করি, তখন আমাকে কালচারাল ক্লাব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, ইউনিভার্সিটি থেকে নোটিশ দিয়ে হয়রানি শুরু হয়। এমনকি টিউশন ফি দ্বিগুণ করে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার করে ফেলা হয়।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টাকাও যদি বাকি থাকে রেজাল্ট দেখা যায় না। কেউ অসুস্থ হয়ে পরীক্ষায় বসতে না পারলে, কোনো সহানুভূতি নেই। বরং আইডি ব্লক করে পরীক্ষা দিতেই দেওয়া হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, “আমি এই দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় আমাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করানো হয়। তারা আমাকে বাইরে টেনে নিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাকে উদ্ধার করে।”
শিক্ষার্থীরা ইউজিসির কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে সিসি টিভির ফুটেজ যাচাই করে দেখা হোক, কারা বহিরাগতদের এনে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা চাই এই অবৈধ চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হোক এবং একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”
তারা আরো দাবি জানান, ইউজিসি’র গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি যেন অতি দ্রুত রিপোর্ট প্রকাশ করে এবং সন্ত্রাস, দখল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার পক্ষে কাজ করেন।