নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের দুই শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি এবং বিটিআরসি সব ধরনের বিরোধ থেকে সরে আসবে। সরকারের পাওনা টাকা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান। আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন মুস্তফা কামাল।
এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যার মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ফলিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিজের কক্ষে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনেও তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি অনুযায়ী, গ্রামীণফোন ও রবির কাছে প্রতিষ্ঠানটির পাওনা ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি টাকা। এ টাকা আদায়ে ব্যান্ডউইডথ সীমিত এবং প্যাকেজ ও সরঞ্জামের ছাড়পত্র (এনওসি) দেয়া বন্ধ করেছিল বিটিআরসি। তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় ৫ সেপ্টেম্বর দুই অপারেটরকে লাইসেন্স (টু-জি ও থ্রি-জি) বাতিল কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। জবাবের সময় দেয়া হয় ৩০ দিন।
এ বিষয়ে বুধবার বিকেল ৩টায় বিটিআরসি ভবনে সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তবে সেটি বাতিল হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু সমস্যা যাচ্ছে। গ্রামীণফোন একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, তারা তাদের কথা বলছে। আমরা আমাদের দাবি করেছি। আমরা যদি বিরোধে জড়িয়ে থাকি তবে অনেক সময় চলে যাবে। এটা তাদের ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, আমাদের রাজস্ব প্রবৃদ্ধিকেও বাধাগ্রস্ত করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক দিন থেকেই আলাপ-আলোচনা করছিলাম। তাদের সঙ্গে একটা সমাধানে আসা উচিত। সমাধানটি একটি উইন উইন সিচুয়েশন থেকে হবে। আমরাও হারব না তারাও হারবে না।’
‘আমাদের ন্যায্য দাবি যতটুকু হবে, ততটুকু আমরা আদায় করার চেষ্টা করব। তারাও সেটা মেনে নেবে, আমরা এটা বিশ্বাস করি। সেজন্য আমাদের এখানে বসা।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্তটি হচ্ছে, আমরা সকল প্রকার এভিনিউজ (পন্থা) পরিহার করে অ্যাক্রোস দ্য টেবিল বসব। এবং আমরা সেটেল করব। এটা হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্ত।’
পাশে বসা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মাননীয় মন্ত্রী আমার পাশে আছেন। তার যেটুকু পাওনা একই প্রক্রিয়ায় আমরা যাব। একই প্রক্রিয়ায় সমাধান আমরা খুঁজে বের করব। মনে হয় এটাই বেস্ট পসিবল এভিনিউজ হবে ফর এ পিসফুল সলিউশন। তারা ব্যবসা করবে, আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে। আমরা তাদের সাহায্য করব। যেটুকু সাহায্য দরকার সেই পরিমাণ সাহায্য পূর্ণাঙ্গভাবে আমরা করব। এটা হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে আমরা যদি অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করি তবে আমাদের অনেক সময় লাগবে। কে লাভবান হবে কে লুজার হবে, আমরা জানি না। ইভেনচুয়েলি আমি মনে করি আমাদের লসের সম্ভাবনা বেশি। আমরা রেভিনিউ হারাব। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন, এই খাতটি অনেকটাই বিঘ্নিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ঠিক করেছি, আমরা অন্য কোনো রাস্তায় যাব না। আমরা ট্রান্সপারেন্ট ও রেসপন্সিবল ওয়েতে ডেলিভার দ্য সার্ভিসেস। হুইচ উইল বি অলসো গুড ফর উই, গুড ফর দ্য কান্ট্রি।’
কীভাবে সমস্যা সমাধান হবে- জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার মনে হয় বলা উচিত হবে না। আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সলিউশনের দিকে যাচ্ছি, সেটা ট্রান্সপারেন্ট হবে, দুপক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে।’
‘আমরা আগের সবকিছু ভুলে একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করব। সমাধান হবে, আপনারা জানতে পারবেন, সেটি দেশের বিপক্ষে যাবে না। কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে, সেটি রিজলভ করে সমাধানে নিয়ে যাব।’
অপারেটররা মামলা প্রত্যাহার করবেন কিনা- এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মামলা প্রত্যাহার করবেন। মামলা প্রত্যাহার না করলেও তো আমরা আলাপই করতে পারব না।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটু অসুবিধা তৈরি করেছি। আমাদের সংবাদ সম্মেলনটি নির্ধারিত ছিল বিটিআরসি ভবনে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হলো যে, গতকাল থেকে দৃশ্যপট বদলানো শুরু করল।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এ বিষয়টি (পাওনা নিয়ে বিরোধ) নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন কথা বলেছি, দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনা করে চেষ্টা করেছি সমাধান করার জন্য। কিন্তু তারপরও একটা সার্টেন স্টেজে গিয়ে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকেই প্রায় চলে যাচ্ছিলাম। আজকে অর্থমন্ত্রী যা বললেন সেটি আমাদের সবারই দৃষ্টিভঙ্গি।’
তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী নিজে উদ্যোগ নিয়ে, দায়িত্ব নিয়ে, নেতৃত্ব দিয়ে আজকে যে অবস্থার মধ্যে আমাদের নিয়ে এসেছেন আমরাও মনে করি আমাদের যেন উইন উইন সিচুয়েশনই হয়। হারতে চাই না, কোনো পক্ষকে হারাতেও চাই না।’
গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, ‘গ্রামীণফোন ২২ বছর ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। এখন সম্পর্ক কিছুটা কঠিন জায়গায় পৌঁছেছে, এ বিষয়টি সমাধান হওয়া প্রয়োজন। আমি আনন্দিত যে বন্ধুত্বপূর্ণ, স্বচ্ছ ও সুন্দর একটি সমাধানের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। এটা বাংলাদেশ সরকার ও আমাদের জন্য সুন্দর গল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।