জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: জামিন পেলেই চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ যাবেন’- এমন মন্তব্য করেছেন দলটির সংসদের মুখপাত্র হারুন অর রশীদ।
গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বিএনপির তিন সদস্যের সংসদীয় প্রতিনিধি দল হাসপাতালে চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে যান। এক ঘণ্টারও বেশি সময় তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলের অপর দুই সদস্য হলেন উকিল আব্দুস সাত্তার ও আমিনুল ইসলাম।
খালেদা জিয়া তার চিকিৎসা নিয়ে কোনো অভিযোগ করেছেন কি-না, এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, ‘উনার যে সব অসুখ-বিসুখ রয়েছে, অবিলম্বে উন্নত ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার। ওনার যে উন্নত চিকিৎসা দরকার, সেটার জন্য বৈদেশিক চিকিৎসা দরকার। উনি চিকিৎসার সুযোগ পেলে তো অবশ্যই বিদেশ যাবেন। আজ উনি জামিন পেলে, কাল বিদেশ যাবেন এবং আজই যদি উনি জামিন পান, ওনার প্রথম প্রায়রিটি হবে চিকিৎসা এবং দেখা যাবে উনি কালই চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন। ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) চিকিৎসার জন্য বিদেশ গেছেন। আজ সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তাকে কেন চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে?’
খালেদা জিয়া সাংগঠনিক বিষয়ে বা নেতাকর্মীদের কোনো বার্তা দিয়েছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি সংসদীয় দলের এ মুখপাত্র বলেন, ‘সাংগঠনিক বিষয়ে উনি খোঁজখবর নিয়েছেন। উনাকে আমরা বলেছি, ম্যাডাম গত এক মাসে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিভাগে সভা-সমাবেশ হয়েছে। সরকারের অনেক বাধাবিপত্তির পরও, লাখ লাখ মানুষ এ সমাবেশে যোগদান করেছে। সাংগঠনিক অবস্থা যেভাবে আমরা চালিয়ে যাচ্ছি, আল্লাহর রহমতে…। উনি বলেন, তোমরা সবাইকে নিয়ে, একসাথে কাজ করো। দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসলে মানুষ যেন মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে, ভোটাধিকার ফিরে পায় তার জন্য তোমরা কাজ করো। ’
‘আপনারা যখন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তখন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। সরকারের সঙ্গে আপনাদের এ ব্যাপার কথা হয়েছে কি-না এবং এর অংশ হিসেবে আজ আপনারা কোনো বার্তা নিয়ে দেখা করেছেন কি-না’, এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, ‘না, আমরা সংসদে যোগদানের পর পার্লামেন্টে যে কজন কথা বলার চেষ্টা করেছি, তার মধ্যে আমাদের মাননীয় নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি অন্যতম ছিল এবং আমি দলনেতা হিসেবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দু-এক জায়গাও কথা বলেছি, তার মুক্তির দাবিও জানিয়েছি। এ ব্যাপারে ওনারা বলেছেন, দেখা যাক, এটা আইনের ব্যাপার। ওনারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলছি, আজও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে জানাচ্ছি যে, উনার জামিনের যে অধিকার সে অধিকার থেকে ওনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
সরকারের পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা আছে কি-না, জবাবে হারুন বলেন, ‘না, এ ব্যাপারে কোনো প্রস্তাবনা নেই।’
প্যারোল ইস্যুতে আজ কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, প্যারোলের ব্যাপার আসবে কেন? উনি তো জামিন পাওয়ার যোগ্য। সুতরাং প্যারোলের বিষয় আসবে কেন?’
হারুন বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের আরও আগে দেখা করা উচিত ছিল। আমরা সরকারের অনুমতি নিয়ে আজ দেখা করতে পেরেছি।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, ‘উনি হাত সোজা করতে পারেন না, হাত কাঁপে। খাবার নিজে খেতে পারেন না, এমন একটি অবস্থায় উনি। এটা তার প্রতি চরম জুলুম। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, ওনার যে জামিনের অধিকার এটা থেকে যেন তাকে বঞ্চিত না করা হয়। ’
হারুন আরও বলেন, ‘আমরা তিনজন হাসপাতালে ম্যাডামকে দেখতে এসেছিলাম, এটা খুব বেদনাদায়ক, পীড়াদায়ক, এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এ বয়সে সরকারের চরম জুলুমের বহিঃপ্রকাশ তার ওপর, এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। উনি চরম অসুস্থ এবং ওনার নিজের খাওয়াটাও খেতে পারেন না। নিজের কাপড়টাও উনি নিজে পরতে পারেন না, এ অবস্থায় ওনাকে বন্দি রাখা কত বড় অমানবিক! উনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন, আমরা আমাদের চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি।’
‘এ জুলুম থেকে তাকে যেন আল্লাহপাক মুক্ত করেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। উনি বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী। আজ উনি যে চরম ও অত্যন্ত অমানবিক জুলুমের শিকার- এটি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরেধী তথাকথিত অভিযানের মধ্য দিয়ে, ক্যাসিনো অভিযানের মধ্য দিয়ে আজ যে চিত্র বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, আজ আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সামান্য দুই কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জামিন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। এটা কত বড় জুলুম! উনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন, উনি যে অসুস্থ’- যোগ করেন হারুন।