নরসিংদী প্রতিনিধি: উচ্চশিক্ষার সনদ লাভের আশায় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন নরসিংদীর সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। তবে এ পর্যন্ত যত পরীক্ষা হয়েছে, এর একটিও তিনি নিজে দেননি। তার হয়ে অংশ নিয়েছেন অন্য কেউ (প্রক্সি পরীক্ষার্থী)। বৃহস্পতিবার এক প্রক্সি পরীক্ষার্থী ধরা পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। নরসিংদী কলেজ কর্তৃপক্ষ তার সব পরীক্ষা বাতিল করেছে, গঠন করেছে তদন্ত কমিটি।
বুবলীর পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সাবেক শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনের স্ত্রী। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন লোকমান। বুবলীর দেবর কামরুজ্জামান কামরুল নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। আরেক দেবর শামীম নেওয়াজ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুবলী এইচএসসি পাস। উচ্চশিক্ষার সনদ লাভের আশায় তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টারের ১৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর একটিতেও তিনি সশরীরে অংশ নেননি।
পরীক্ষায় অংশ নিতে এসে বৃহস্পতিবার ধরা পড়েন প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশা। তাকে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ সময় নিজেকে তামান্না নুসরাত বুবলী দাবি করলেও ছবিযুক্ত প্রবেশপত্র দেখাতে পারেননি এশা। এমপি বুবলীর পরীক্ষা কিভাবে দিচ্ছেন তা জানতে চাইলেও সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি। তবে এক পর্যায়ে জানিয়েছেন, বুবলীর হয়ে সর্বশেষ ৮ পরীক্ষায় ৮ জন অংশ নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সব সময়ই যেহেতু প্রক্সি পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিত, সেহেতু এমপির লোকজন ও ক্যাডার বাহিনী পরীক্ষা কেন্দ্র ও হল পাহারায় থাকতেন। প্রক্সি পরীক্ষার বিষয়টি সবাই জানলেও ভয়ে মুখ খুলতেন না। নিয়মানুযায়ী, প্রক্সি পরীক্ষার্থী ধরা পড়লে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়নি হল কৃর্তপক্ষ। পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কারের পর স্বাভাবিকভাবেই বের হয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী সরকারি কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও হল ইনচার্জ প্রফেসর শফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থীর ছবিযুক্ত প্রবেশপত্র ছিল না। প্রবেশপত্র নাকি হারিয়ে গেছে, তাই থানায় জিডির কপি নিয়ে পরীক্ষার হলে এসেছে। তাই আমরা তাকে শুরুতে চিনতে পারিনি। বিষয়টি জানার পর প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশাকে আটক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় সেখানে দায়িত্বে ছিল মাত্র একজন পুলিশ সদস্য। কথা বলার ফাঁকে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে কথা বলতে এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীকে ফোন করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি ঢাকায় এমপি হোস্টেলে রয়েছেন বলে জানান তার এক ঘনিষ্ঠজন। জানতে চাইলে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নেয়া তামান্না নুসরাত বুবলীর সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তাকে পরীক্ষা থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।