নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্মতিপত্র (এলওআই বা লেটার অব ইনটেন্ট) পাওয়া দুটি ব্যাংক শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক দুটি হলো- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ও সিটিজেন ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এলওআই দেওয়ার পর ব্যাংকগুলোকে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে লিমিটেড কোম্পানি গঠন করা, ৫০০ কোটি টাকা ডিপোজিট করা অন্যতম। এসব শর্ত পূরণ করলে তাদের চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া হবে। কিন্তু ব্যাংক দুটি শর্ত মেনে তথ্যাদি সরবরাহ করতে পারেনি। তাই চূড়ান্ত অনুমোদনের সিদ্ধান্ত আবারও পিছিয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য আরও সময় চেয়েছে ব্যাংক দুটি।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এলওআই পাওয়া বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংককে চূড়ান্ত লাইসেন্সের জন্য কিছু শর্ত দেওয়া হয়। তারা সবগুলো শর্ত পূরণ করতে পারেনি। প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য তারা সময় চেয়েছে। বোর্ড বিষয়টি বিবেচনা করে সময় দিয়েছে। তবে পিপলস ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন না আসায় আলোচনা হয়নি।
এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা যায়, উল্লিখিত বিষয় ছাড়াও আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিরীক্ষা ও হিসাব ও কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়েছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩৯৮তম পর্ষদ সভার কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। একই সভার স্থগিতকৃত ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট পারফরমেন্সের রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয়। দেশের আর্থিক খাতের প্রধান প্রধান সূচকগুলো পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রকল্পের আওতায় রোডম্যাপ ২০২১ বাস্তবায়নে গভর্নমেন্ট ইন্সট্রুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংক্রান্ত সফটওয়্যার সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকে চালু করণ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের দুইটি বোইং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ, একটি স্পেয়ার ইঞ্জিন ও একটি স্পেয়ার আই পি ইউ এর ডেলিভারি পেমেন্ট অর্থায়নে সোনালী ব্যাংক থেকে ৩১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সোনালী ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আমানত রাখার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা, পরিবেশবান্ধব পণ্য বা উদ্যোগের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আকার ২০০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত তথ্য অবমুক্তকরণ নীতিমালা ২০১৯ চূড়ান্ত অনুমোদন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বর্ধিত চিকিৎসা সুবিধা সংক্রান্ত নীতিমালা পর্যালোচনা করা হয়।
এদিকে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি খাতের তিনটি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেগুলো হলো- বেঙ্গল কমার্শিয়াল, পিপলস ও সিটিজেন ব্যাংক। অনুমোদন পাওয়া বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের’ প্রধান উদ্যোক্তা হলেন- বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। যদিও শুরুতে ‘বাংলা ব্যাংক’ নামেই অনুমোদনের আবেদন জমা দেয়া হয়েছিল। দেশে তাদের প্লাস্টিক শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ভাই।
দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক হলেন- বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাশেম। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জন্য ব্যাংকটির আবেদন করা হয়েছে।
বিধি মোতাবেক, ১০ লাখ টাকা ফি দিয়ে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন পেতে আবেদন করতে হয়। আর চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে ৪শ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন লাগে। তবে এ তিনটি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪শ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫শ কোটি টাকা করতে শর্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ ছাড়া ব্যাংকগুলো প্রথমে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্ম্স (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নিয়ে কোম্পানি গঠন করতে হবে। এরপর ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী ব্যাংকের জন্য চূড়ান্ত লাইসেন্স দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।