আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত অক্টোবরে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), মাত্র তিন মাসের মাথায় তা সংশোধন করে তারা জানিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে এই সময়ে প্রবৃদ্ধি হবে আরও কম। জাতিসংঘের এই আর্থিক সংস্থা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করেছে বলে সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ট্যুডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আইএমএফ বলছে, ২০১৯ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশের তুলনায় চলতি বছরে এটি দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। গত এক দশকের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে গত বছরের প্রবৃদ্ধিই ছিল সর্বনিম্ন। গত অক্টোবরে দেয়া পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি কমানো হয়েছে ০.১ শতাংশ।
২০২১ সালে প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা বেড়ে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে সেটাও অক্টোবরে দেয়া পূর্বাভাসের চেয়ে ০ দশমিক ২ শতাংশ কম।
আইএমএফের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস সংশোধনে মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশাই ফুটে উঠেছে, বিশেষ করে ভারতের। দেশটিতে আমানত সংকট ও নন-ব্যাংকিং সেক্টরে সৃষ্ট অস্থিরতার মধ্যে দেশীয় চাহিদাও কমে গেছে আশাতীতভাবে।
এছাড়া ল্যাটিন আমেরিকার দেশ চিলিতে সামাজিক অস্থিরতা, মেক্সিকোয় বিনিয়োগ দুর্বলতা, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তির পরও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস না ফেরা প্রভৃতি কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি।
জাতিসংঘের আর্থিক এই সংস্থা বলছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়লেও এতে বাজার-ভাবনায় বেশ বড় ধরনের ধাক্কা আসে। স্থিতিশীলতার এই চিহ্ন বেশ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, এমনকি স্থির-স্থিতিস্থাপক ভোক্তা ব্যয় এবং উন্নত ব্যবসায়িক ব্যয়ের মধ্যে বন্ধন আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
তহবিল শুল্কের ওপর অনিশ্চয়তা এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগে এর নেতিবাচক প্রভাবগুলোকে প্রবৃদ্ধি সীমিত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। যদিও তারা বলছে, বিশ্বের সামষ্টিক অর্থনীতিতে মোড় ঘোরানোর মতো কয়েকটি লক্ষণ এখনও দৃশ্যমান।
চীনের ভালো, ভারতের খারাপ: নতুন অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে আইএমএফ জানিয়েছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার পারদ আপাতত আর ওপরে ওঠার সম্ভাবনা নেই। ২০২০ সালে চীনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ০ দশমিক ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করেছে আইএমএফ। কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে চীনের আংশিক শুল্কহার হ্রাস বা ছাড় পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে, চীন আগামী দুই বছরে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য কেনার আশ্বাস দিলেও এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি বাড়েনি। বরং আইএমএফ বলছে, গত অক্টোবরে দেয়া পূর্বাভাসের চেয়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি আরও ০ দশমিক ১ শতাংশ কমে ২ শতাংশ হতে পারে। ২০১৭ সালের কর ছাড় এবং ফেডারেল রিজার্ভের অর্থ সহজীকরণের প্রভাব খুব একটা না পড়ায় দেশটির প্রবৃদ্ধি বাড়বে না বলে জানানো হয়েছে।
ইউরোপীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিও গত অক্টোবরের তুলনায় ০ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। জার্মানিতে উৎপাদন সংকোচন, স্পেনে দেশীয় চাহিদা হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে ২০২০ সালে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ারও প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।
তবে আইএমএফের নতুন হিসাবে সবচেয়ে বড় অবনমন ঘটেছে ভারতের। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অক্টোবরের পূর্বাভাসের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে দেশটিতে ২০২০ সালের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে আর্থিক এবং রাজস্ব প্রণোদনার ফলে ২০২১ সালে আবারও ভারতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশে ফিরতে পারে, যদিও সেটি গত অক্টোবরে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় ০ দশমিক ৯ শতাংশ কম।
এছাড়া সামাজিক অস্থিরতার কারণে চিলির প্রবৃদ্ধিতে বড় আঘাত আসবে। অক্টোবরের হিসাব অনুযায়, ১ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ২০২০ সালে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে মেক্সিকোতে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির ফলে ঝুঁকি কিছুটা কাটলেও আইএমএফের মতে, সেটা এখানো পুরোপুরি অগ্রাহ্য করার মতো নয়। পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি, বিশেষ করে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংকট বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে ব্যঘাত ঘটাতে পারে।
অনেক দেশে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থার সংকট, প্রশাসনে প্রতিনিধিত্বের অভাব প্রভৃতি অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে, যা প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।