নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-১৮ আসনটিতেও নিজেদের প্রার্থী চায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ। ঢাকা-১০ আসনে উপনির্বাচনের পর এখন চোখ তাদের উত্তরার এই আসনে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনটিতে নৌকার হাল ধরতে ইতিমধ্যে তারা লবিং শুরু করেছেন। কেউ কেউ প্রার্থিতা জানান দিতে পোস্টার সাঁটিয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের চাওয়া এই আসনটি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকুক।
দলের অনেক দুঃসময়ের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা রয়েছেন তাদের হাতেই তুলে দেওয়া হোক নৌকার টিকিট। সাহারা খাতুনের আসনটি তার মতো একজন পরীক্ষিত ও ত্যাগী রাজনীতিক হাল ধরুক এমনটাই চান নেতা-কর্মীরা। তারা ধানমন্ডির মতো উত্তরার আসনটি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে নারাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে রপ্তানি পোশাকশিল্পের শীর্ষ নেতাসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন পেতে বেশ তৎপর। এ লক্ষ্যে তারা এলাকায় পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রাজনীতির মাঠে না থাকলেও হঠাৎ কর্মী-সমর্থক বানিয়ে নিজেদের পক্ষে অনেক কিছু লিখছেন। তাদের এমন প্রচারণায় দলের নেতা-কর্মীরাও পড়েছেন ভাবনায়। রাজধানীর প্রবেশদ্বারখ্যাত এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাহারা খাতুন প্রায় ১২ বছর এমপি ছিলেন। গত ৯ জুলাই থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর পর নৌকার হাল ধরছেন কে সে আলোচনা এখন সর্বত্র। নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, ঢাকা-১৮ (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, তুরাগ, উত্তরা এবং উত্তরখান থানা এলাকা নিয়ে গঠিত) আসনে নৌকার হাল ধরতে পারেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এ ছাড়া স্থানীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান, আলহাজ হাবিব আহসান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, দক্ষিণ খান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তফাজ্জল হোসেন ও খসরু চৌধুরী। এ ছাড়াও নৌকার টিকিট পেতে ব্যাপক পোস্টার সাঁটিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। প্রয়াত এমপি সাহারা খাতুনের ভাতিজা আনিসুর রহমানও এলাকায় পোস্টারিং করেছেন।
আরও দুজন ব্যবসায়ী জোর লবিং-তদবির করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে কর্মীরা একাট্টা। ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি) এর মতো আসনটি ব্যবসায়ীদের হাতে ছাড়তে চান না তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ ফজলে নূর তাপস এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। পদত্যাগ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করে জয়ী হন তিনি। উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান বিজিএমইএ এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এ নিয়ে ঢাকা-১৮ আসনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে বার্তা দিচ্ছেন।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দ কিংবা স্থানীয়দের মধ্যে এখন অনেকেরই এমপি হওয়ার যোগ্যতা আছে। ঢাকা শহরে নতুন করে কোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে নমিনেশন দিয়ে রিস্ক নিতে চায় না দল। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সামনের জাতীয় নির্বাচন ও বিরোধী দলকে মাথায় রেখে এমন চিন্তা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকা প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকেই প্রথম পছন্দ নেতা-কর্মীদের। তাদের যে কাউকে দেখতে চান আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন। রাজধানীসহ সারা দেশেই নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে তার। তিনি ঢাকা-১৩ আসনে (মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর) আসনের সাবেক এমপি ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ক্রাইসিসম্যান হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার। আগামীতে জাতীয় নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলন সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দলীয় প্রার্থী নেতা-কর্মীদের পছন্দের প্রার্থী নানক। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। রাজধানীসহ সারা দেশেই দলীয় কর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। করোনাকালীন তিনি দলীয় কর্মসূচিতে ব্যাপক সক্রিয় রয়েছেন। নাছিম মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি। বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের মহাসচিব। দলের দুঃসময়ে অনেক নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সেক্ষেত্রে নাছিমও পছন্দের তালিকায় রয়েছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেছেন, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
’স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের দুঃসময়ের এই কান্ডারিদের মধ্যে যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে কাজ করা সুবিধা হবে। কারণ তারা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চেনেন এবং সবার জন্য তাদের দরজা উন্মুক্ত। অন্যদিকে স্থানীয় কোনো রাজনীতিবিদকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও নেতা-কর্মীদের আপত্তি নেই। কিন্তু ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ছেড়ে দেওয়া ধানমন্ডির আসনটির মতো উত্তরার আসনটিকে অরাজনৈতিক ব্যক্তির হাতে ছাড়তে নারাজ দলীয় নেতা-কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা কাদের খান বলেন, রাজনীতিবিদের এই আসনে যেন একজন রাজনীতিবিদকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। দলে যারা ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা আছেন তাদের মধ্য থেকে যেন মনোনয়ন দেওয়া হয় নেত্রীর কাছে এই আবেদন জানাই। হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসে কোনো ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোক আমরা তা চাই না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করুক। রাজনীতিবিদরা রাজনীতিতে থাকুক। ’ তিনি বলেন, ‘নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে সবাইকে নিয়ে সাহারা খাতুনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার বলেন, রাজনীতিবিদরা যত দুর্যোগই আসুক দলের প্রশ্নে ও নেত্রীর প্রশ্নে আপসহীন থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্যক্তিরা সুবিধাটুকুই নেবে। দুর্দিন এলে কেটে পড়বে। অতীতেও এমন রেকর্ড আছে। নেত্রীর কাছে আবেদন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য অনেক যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা আছেন। ঢাকার প্রবেশদ্বারে যেন দলের পরীক্ষিত নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব আহসান নিজের মনোনয়নের ব্যাপারে বলেন, আমি ছাড়াও দলে অনেক যোগ্য ও ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা রয়েছেন যারা উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। দল থেকেই প্রার্থী দেওয়া হোক এমনটাই চাওয়া।