অনলাইন ডেস্ক: পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বুধবার যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র। অঞ্চলটিতে ফ্রান্স ও গ্রিসের যৌথ মহড়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় পাল্টা এ মহড়া চালায় আঙ্কারা ও ওয়াশিংটন। তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তুরস্কের ফ্রিগেটস টিসিজি বারবারোস এবং টিসিজি বুর্গাজাদা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে আমেরিকান ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস উইনস্টন এস চার্চিলকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ নৌ অনুশীলন চালিয়েছে।
মহড়াকালীন তিনটি যুদ্ধজাহাজের ছবিও প্রকাশ করেছে আঙ্কারা। এরমধ্যে দুটি ছিল তুর্কি পতাকাবাহী। অন্যটিতে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের পতাকা উড়ছিল।
এদিকে এই মহড়ার দিনই পূর্ব ভূমধ্যসাগর পরিস্থিতি নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবারের এই ফোনালাপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন দুই নেতা।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট এক ঘোষণায় তুরস্ক জানায়, ভূমধ্যসাগরের বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমায় তাদের গবেষণা জাহাজ অরুচ রেইসের অনুসন্ধানের সময় ২৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই অনুসন্ধানকে বেআইনি হিসেবে আখ্যায়িত করে গ্রিস। এর জেরে পাল্টাপাল্টি মহড়ার ঘোষণা দেয় তুরস্ক ও গ্রিস। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আঙ্কারা ও এথেন্স সফর করেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস। এরমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে এরদোয়ানের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প।
আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ফোনালাপে এরদোয়ান ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দেন যে, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্ক কোনও ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে না।
এরদোয়ান বলেন, তার দেশ জোরালোভাবে এটা প্রমাণ করেছে যে, তারা উত্তেজনা কমাতে আগ্রহী। এ ইস্যুতে তুরস্ক সংলাপে বসতেও প্রস্তুত রয়েছে।
২৬ আগস্ট একাদশ শতকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সেলজাক তুর্কিদের বিজয় স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে কথা বলেন এরদোয়ান। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে কোনও ছাড় দেবে না তুরস্ক। কৃষ্ণ সাগর, আজিয়ান সাগর ও ভূমধ্যসাগরে নিজেদের অধিকার বজায় রাখতে আঙ্কারা সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, ‘এসব বিষয়ে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তা তাদের ধ্বংস ডেকে আনবে।’
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা অন্য কারও অঞ্চল, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থের দিকে নজর দিচ্ছি না। কিন্তু যেগুলো আমাদের সেগুলোতে কোনও প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।’
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই সমুদ্র এলাকায় তেল ও গ্যাসের মজুত অনুসন্ধান জোরদার করেছে তুরস্ক। ২০২০ সালের ২১ আগস্ট কৃষ্ণসাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুতের সন্ধান পাওয়ার ঘোষণা দেয় আঙ্কারা। ওই মজুত পাওয়ার পর অনুসন্ধান কাজে আরও গতি আনে তুরস্ক। এ নিয়ে দেশটির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে প্রতিবেশী গ্রিস। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই দেশের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানি। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, রয়টার্স।