চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে পাঠানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেই তালিকায় আরও যোগ হয়েছে তিন পুলিশ সুপারের নাম।
সচিবের অবসরের ঘটনার একদিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে ‘জনস্বার্থে’ অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আদান–প্রদান করতেন, কোনো কাজ করতেন না- তাদের অবসরের নথিতে এমনটাই অভিযোগ করেছে পুলিশ সদর দফতর।
অবসরে পাঠানো পুলিশ সুপাররা হলেন: সিআইডির মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী ও মুহাম্মদ শহীদুল্ল্যাহ চৌধুরী। আরেকজন দেলোয়ার হোসেন মিঞা, ছিলেন পুলিশ অধিদফতরে। এদের মধ্যে মুহাম্মদ শহীদুল্ল্যাহ চৌধুরী ও দেলোয়ার হোসেন মিঞা বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১২তম ব্যাচের। আর মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
তাদের অবসরে পাঠানোর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রজ্ঞাপনে সই করেন সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, আরও প্রায় পাঁচ থেকে ছয় জন সচিবসহ সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেককেই জনস্বার্থে অবসরে পাঠানো হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, সরকারবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছিল বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে উল্লেখ করেন।
এর আগে, তথ্যসচিব মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ পাওয়ার পরদিন সোমবার (১৭ অক্টোবর) তিনি দাবি করেন, সরকারবিরোধীদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। কোন অপরাধে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো সেটা জানেন না তিনি। নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে কখনোই আপস করেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অবসরে পাঠানো সিআইডির এসপি আবদুল্লাহেল বাকী তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না। এখন তারা (সরকার) অনেক কিছু বলতেই পারেন। কিন্তু আমি কাজ না করলে তো আমাকে কয়েক দিন আগেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে দুবাই পাঠাতেন না। দীর্ঘদিন আমাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি, আমি জানি না।’
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তারা কোনো কাজ করেন না। হাজিরা দিয়ে চলে যান। তাদের পেছনে ৮–১০ জন কনস্টেবল থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা ফেসবুকে ভুয়া সংবাদ আদান–প্রদান করেন। পুলিশ সদর দফতর আমাদের কাছে তাদের অবসরে পাঠানোর প্রস্তাব পাঠালে আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি।’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে। তবে যে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে।