ব্রাজিলের পর জার্মানির সঙ্গে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সফল দল তারা। ঝুলিতে আছে চারটি বিশ্বকাপের ট্রফি। দুনিয়াজুড়ে কোটি ফ্যানবেজ কিংবা গায়ে লেপ্টানো জায়ান্টের তকমা। ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়নও দলটা। অথচ রাশিয়ার পর কাতারের টিকিটও মেলেনি ইতালির। আজ্জুরিহীন বিশ্বকাপে কিছুটা হলেও জৌলুশ কমেছে আসরের। সঙ্গে একটা প্রজন্ম মিস করছে নান্দনিক ইতালির, কাউন্টার অ্যাটাকের ছন্দময় ফুটবল।
পাওলো রসি, শিয়াভিও, জিনো কোলাসি, সিলভিও পিওলার মতোন কিংবদন্তিরা গত হয়েছেন আগেই, কিন্তু ব্যাতজিও, পিরলো, গ্রুসো, মালদিনি, বুফন, টট্টি, দেল পিয়ারো, ক্যানাবেরোরা স্বস্তিতে ঘুমাতে পারছেন তো! পেনাল্টি মিসের আক্ষেপ এখনও কতটা পোড়ায় জর্জিনিওকে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো জানার উপায় নেই, তবে আভিজাত্যের রঙে ছাপিয়ে বেদনার রং নীলে, ইতালির কোটি সমর্থকের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ টের পাওয়া যায় ঠিকই।
ইতালি, বিশ্বফুটবলের অবিসংবাদিত রাজা। চার চারবার অন্য দলগুলোর অহম ভূপাতিত হয়েছে যাদের বুটে। ঘর সামলে বুলেট গতির নান্দনিক কাউন্টার অ্যাটাক। ওটাই তো ইতালির ট্রেডমার্ক। অথচ টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বরেকর্ড গড়ার পরও বিশ্বকাপে নেই আজ্জুরিরা। এ এক শোচনীয় ব্যর্থতা।
বিশ্বকাপের আলোকছটায় চারপাশ আলোকিত হবে, কিন্তু নীল জার্সিটা থাকবে না–২০১৮-র আগে কেউ কি এমন দৃশ্য ভুলেও কল্পনা করেছিল? কিন্তু তাই হয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপে। সেবার এমন আঘাত, অঘটন বলেই চালিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু এবার?
এবার তো বছরখানেক আগেই মানচিনি ম্যাজিকে চরম দাপট দেখিয়ে ইতালি জিতেছিল ইউরোর শেষ্ঠত্ব। বাছাইয়ে ‘সি’ গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচের সমীকরণ ছিল এমন জিতলেই হতো। অথচ জর্জির পেনাল্টি মিসে সুইসদের পর তারা ড্র করে বসল নর্দান আয়ারল্যান্ডের সঙ্গেও। সমর্থকদের এটা হজম করা যদি হয় কষ্টের, তবে প্লে-অফে নর্দান মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে হারটা মেনে নেয়া–জীবনের কঠিনতম সময়ের একটা।
ইতালির কিংবদন্তি ফুটবলার পাওলো মালদিনির কাছে তো ইতালি এবারের বিশ্বকাপে না থাকাটাকে অবিশ্বাস্যই ঠেকছে। এক সাক্ষাৎকারে মালদিনি বলেছেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে ইতালির না খেলতে পারাটা এক শোচনীয় ব্যর্থতা। চারবারের চ্যাম্পিয়ন হয়েও আমরা বিশ্বকাপে নেই। এটা মেনে নেয়া কঠিন। কী আর করা! এটিই বাস্তবতা।’
তবে তারচেয়ে বড় ক্ষতটা বোধহয় বিশ্বফুটবলের। উল্লাসে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে নিশ্চিত। ছলছল চোখে, বুকে পাথর বেঁধেই হয়তো বিশ্বকাপ দেখতে বসবেন আজ্জুরি সমর্থকরা। সঙ্গ আশায় বাঁধবেন বুক। এবার না হলেও কনকাক্যাফের বিশ্বকাপে, বিশ্বকাপে জানান দিয়ে নিশ্চয়ই পতপত করে উড়বে ইতালির গৌরবের পতাকা।