ফসলি জমি অনাবাদি না রাখা ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চলতি রবি মৌসুমে চট্টগ্রামের ৮০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। সম্প্রতি এক ইঞ্চি জমিও পতিত না রাখার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় জমি অনাবাদি না রাখার বার্তা দেয় জেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, মীরসরাইয়ে ৬৭৫ জন, ফটিকছড়িতে তিন হাজার ১২৫ জন, হাটহাজারীতে এক হাজার ৮০০ জন, রাউজানে এক হাজার ৮০০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় দুই হাজার ৮৭৫ জন, বোয়ালখালীতে ৭৫০ জন, পটিয়ায় এক হাজার ৮০০ জন, কর্ণফুলীতে ৩৫০ জন, আনোয়ারায় দুই হাজার ২০০ জন, চন্দনাইশে এক হাজার ৩৭৫ জন, লোহাগাড়ায় এক হাজার ৫৫০ জন, সাতকানিয়ায় দুই হাজার ৭০০ জন এবং বাঁশখালীতে চার হাজার জন কৃষক এসব প্রণোদনা পাবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি রবি মৌসুমে (২০২২-২৩ সাল) বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টর জমি। বোরো আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ও সার সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনা। বোরো আবাদে দুই ক্যাটাগরিতে প্রণোদনা দেওয়া হবে ৭৩ হাজার কৃষককে। এছাড়া রবিশস্য উৎপাদনের জন্য প্রণোদনা পাচ্ছেন আরো সাত হাজার কৃষক। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে এবার প্রণোদনা পাচ্ছেন ৮০ হাজার কৃষক।
কৃষি বিভাগ জানায়, মীরসরাই উপজেলায় ২১ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে প্রণোদনা পেয়েছেন এক হাজার ২৩০ জন কৃষক। সীতাকুণ্ড উপজেলায় ছয় হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ফটিকছড়িতে ২১ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর বিপরীতে প্রণোদনা পেয়েছেন ছয় হাজার কৃষক।
এছাড়া হাটহাজারীতে ৯ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তিন হাজার ৫০০ জন, রাউজানে ১১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তিন হাজার ৪২০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাঁচ হাজার ৪৮০ জন, বোয়ালখালীতে চার হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক হাজার ৪০০ জন, পটিয়ায় (কর্ণফুলীসহ) ১৩ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তিন হাজার ৭০০ জন, আনোয়ারায় সাত হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চার হাজার ৫০০ জন, চন্দনাইশে আট হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দুই হাজার ৬৫০ জন, লোহাগাড়ায় ১১ হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তিন হাজার জন, সাতকানিয়ায় ১২ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাঁচ হাজার ১৫০ জন, বাঁশখালীতে ১৪ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাত হাজার ৭৫০ জন ও সন্দ্বীপে ২৪ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১০০ জন কৃষক প্রণোদনা পেয়েছেন।
এ ধাপে ৪৮ হাজার কৃষককে দুই কেজি করে হাইব্রিড বীজ দেওয়া হবে। এছাড়া ২৫ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে দেওয়া হবে সার ও বীজ। প্রতিজন কৃষককে ১০ কেজি করে ডিএপি, ১০ কেজি করে এমওপি ও পাঁচ কেজি করে উফশী জাতের বীজ দেওয়া হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বোরো ও রবিশস্যের আবাদ এবং উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোয় বড় ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রামে প্রণোদনা পাচ্ছেন ৮০ হাজার কৃষক।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার জন্য যতটুকু সম্ভব খাদ্য উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সে অনুযায়ী চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে নির্দেশনা দিয়েছি। কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে অনাবাদি জমিগুলো কিভাবে আবাদ করা যায় সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করছি।