নিজস্ব প্রতিবেদক : “দি লাইফ সেভিং ফোর্স বাহিনী”র মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, পানি সংকট, উৎসুক জনতা ও বাতাসের কারণে রাজধানীর গুলিস্তান বঙ্গবাজার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে।
গুলিস্তানের বঙ্গবাজার মার্কেটি ছিল অত্যন্ত এবং অধীক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিপূর্বে এদেরকে ১০ বার নোটিশ করা হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, গত এক বছরে ১৩ জন ফায়ার ফাইটার শহীদ হয়েছেন। নিহত ১৩ ফায়ার ফাইটার অগ্নিবীর খেতাব পেয়েছেন।
এছাড়া ২৯ জন আহত হয়েছেন। আজকের এ ঘটনায় আমাদের ৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন। কেন বা কারা ফায়ার সার্ভিসের ওপর আঘাত আনলো তা আমার বোধগম্য নয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১ টায় গুলিস্তান বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের গেটে সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেসব্রিফিংয়ে সংস্হাটির ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উধর্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্হিত ছিলেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ৪৮ টি ইউনিটের চেষ্টায় ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়া সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও ওয়াসাসহ অনেক বাহিনী ও সংস্থা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে।
কেউ হতাহত হয়েছে কি জানতে চাইলে তিনি জানান, আজকের আগুনে ফায়ার সার্ভিসের ৮ জন সদস্য আহত রয়েছেন। তাদের মধ্যে দু”জন ক্রিটিক্যাল অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনিস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। ফায়ার সার্ভিস সব দুর্যোগে সবার আগে মানুষের পাশে থাকে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, কেন আমাদের সদস্যদের ওপর আক্রমণ? কেন আঘাত? এ আগুনের সুষ্ঠু তদন্ত আমরা করবো এবং আপনাদের জানাবো।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবনটি অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনা করা হয়েছিল। আমরা ঘোষণা করেছিলাম এবং আমরা ব্যানারও দিয়েছিলাম। এরপরে ১০ বার নোটিশ দিয়েছি যে এই ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ‘আমরা এই মার্কেটের সামনে এরকম ব্যানারও টাঙিয়েছিলাম ২০১৯ সালে। ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মো. মাইন উদ্দিন জানান, আগুন লাগা মার্কেটটি ও ফায়ার সার্ভিসের অফিস রাস্তার এপাশ-ওপাশ। আমি ফায়ার সার্ভিসের ডিজি হিসেবে বলতে চাই, আমাদের ওপর কেন হামলা হলো? কারা করেছে? এ ঘটনায় তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, এখানকার উৎসুক জনতার ভিড়ে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। এখানে এত বেশি ভিড় ছিল যে কোনো জায়গায় গিয়ে আমাদের সদস্যরা কাজ করবেন সেই জায়গাটিও ছিল না। দ্বিতীয় সমস্যাটি ছিল পানির স্বল্পতা, আর তৃতীয় সমস্যাটি হলো বাতাস। বাতাসের কারণে এক জায়গার আগুন আরেক জায়গায় চলে যায়। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে, আমি বলছি আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে, আগুন আর ছড়াবে না। কিন্তু নির্বাপণ করতে আমার আর একটু সময় লাগবে।
এসময় তিনি দুঃখপ্রকাশ করে সকলের উদ্দেশে বলেন, আমাদের কর্মীরাতো নিজের জীবন দিয়ে আপনাদের রক্ষা করেন, তাদেরই কেন আঘাত করা হলো, কারা আঘাত করলো! এই উচ্ছৃঙ্খল লোকজন কারা? কেন তারা এমন আচরণ করলো!! আমাদের যেসব গাড়ি জাতীয় সম্পদ ও মূল্যবান জীবন রক্ষা করে, সেইসব গাড়ি কি উদ্দেশ্যে ভাঙচুর করা হলো? এক প্রশ্নের জবাবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এই দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত কমিটি নিরূপণ করবে। বঙ্গবাজারের আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত করে জানাতে পারব। তবে, এটুকু বলতে পারি, সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদারকি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবাই বিষয়টিকে নজরে রাখছেন। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা পুরো মার্কেটসহ বরিশাল প্লাজায়ও ছড়িয়ে পড়ে। (জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ও ০১৭১৫-২৫৯৩৯৪ নম্বর-এর মাধ্যমে) আজ সকাল ৬ টা ১০ মিনিটের সংবাদ পাওয়া যায়।
২২টি ফায়ার স্টেশনের ৪৮টি ইউনিট আগুনে কাজ করে। আজ দুপুর ১২ টা ৩৬ মিনিটের সময় ওই লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। মোট ৬৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষ। এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৮ জন আহত হয়েছেন যারা ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। বিপুল পরিমাণ মানুষের ভিড়ে অগ্নিনির্বাপণ বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত হয় ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানা গেছে, উচ্ছৃঙ্খল জনতা ফায়ার সার্ভিসের ১১টি গাড়ি এবং অধিদপ্তরের ভেতরে প্রবেশ করে ইআরসিসি ভবন ও রিসিপশন ভবন ভাঙচুর করে এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মারধর করে। বাইরে থেকেও উচ্ছৃঙ্খল লোকজন অধিদপ্তরের ভেতরে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। অগ্নিনির্বাপণের সময়ও আমাদের অনেক কর্মী মারধরের শিকার হন। পরে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যগণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল সূত্র বলছে, বঙ্গবাজার মার্কেটের আগুন নির্বাপণের সময় বিপুল জনতার ভিড়, আগুন নেভানোতে বাধা প্রদান, ভাঙচুর, দূর থেকে পানি সংগ্রহ করা, মার্কেটের বিভিন্ন পাশ তালাবদ্ধ থাকা, বঙ্গবাজারের পশ্চিম পাশের রাস্তায় বিপুল পরিমাণ মালামাল রাখায় গাড়ি-পাম্প স্বাভাবিকভাবে মুভমেন্ট করতে না পারা এবং ওই মালামালের মাধ্যমে আগুন বরিশাল প্লাজায় ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদি অগ্নিনির্বাপণ কাজকে বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত করে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ২০১৮ সালে বঙ্গবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের নিয়েও ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে বঙ্গবাজারের নিরাপত্তা বিষয়ে করণীয় নিয়ে সভা করা হয়। এ সময় তাদের করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন রকম পরামর্শ প্রদান করা হয়।