ধর্ম ডেস্ক,সিটিজেন নিউজ: হজ ও ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধার পর সর্ব প্রথম যে তাসবিহ ও কাজ সবচেয়ে বেশি জরুরি তাহলো তালবিয়া পড়া। হজ ও ওমরার সফরে এ তাসবিহ ‘তালবিয়া’-ই মানুষ বেশি বেশি পড়ে থাকে। আর এতে রয়েছে অনেক সাওয়াব ও ফজিলত।
হজ ও ওমরা পালনকারীদের অনেকেই তালবিয়াসহ হজের নানাবিধ কাজগুলো সম্পর্কে অবগত থাকে না। হজের অন্যান্য কাজগুলো কারো সাহায্যে আদায় করতে পারলেও বিশুদ্ধভাবে তালবিয়া পাঠ করা অনেকের জন্যই কষ্টকর হয়ে পড়ে।
নিজ নিজ দেশ থেকে রওয়ানা হওয়ার পর থেকে হজের পুরো সময়টাতে যখনই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে, তখনই এ তালবিয়া পাঠের গুরুত্ব অনেক বেশি। তালবিয়ার গুরুত্ব, ফজিলত, তালবিয়ার পাঠের শর্ত এবং যেসব স্থানে তালবিয়া পাঠ করতে হবে সেগুলো জেনে নেয়া এবং শিখে নেয়া জরুরি। কেননা হজ ও ওমরার পুরো সফর জুড়েই রয়েছে তালবিয়া পাঠের আবশ্যকতা।
তালবিয়া পাঠের শর্ত
হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্য ইহরামের পর প্রথম কাজই হলো তালবিয়া পড়া। আর প্রথম বার তালবিয়া পড়া হজ ওমরার জন্য শর্তও বটে। অতঃপর যতদিন হারামে থাকবে ততদিন তালবিয়া পড়া সুন্নাত।
যেসব দিন ও স্থানে তালবিয়া পাঠ করতে হবে
হজের সব রোকনগুলোতেই উচ্চ স্বরে হাজিগণ (নারীরা নিচু স্বরে) তালবিয়া পাঠ করবেন। আর তাহলো-
>> আরাফাতের ময়দানে।
>> মিনায়।
>> মুজদালিফায়।
>> হজ ও ওমরার এক রোকন থেকে অন্য রোকনের মধ্যবর্তী সময়ে তালবিয়া পড়া।
>> উঁচু স্থানে আরোহন কিংবা নিচে নামার সময় তালবিয়া পড়া।
এক কথায় হজের সফরে সার্বক্ষণিক ওঠা-বসা, ঘুমাতে যাওয়া, ঘুম জেগে ওঠার পর কিংবা স্বাভাবিক চলাফেরাসহ প্রত্যেক ফরজ ও নফল নামাজের পর বেশি বেশি তালবিয়া পড়া।
তালবিয়া ও তা পাঠের নিয়ম : পুরো তালবিয়াকে ৪ ভাগে (নিঃশ্বাসে) ৩ বার পাঠ করা-
لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ –
لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ –
اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ –
– لاَ شَرِيْكَ لَكَ
তালবিয়ার উচ্চারণ
> লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক,
> লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক,
> ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্ক,
> লা শারিকা লাক।
তালবিয়ার অর্থ
>> আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত!
>> আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই।
>> নিঃসন্দেহে সব প্রশংসা ও সম্পদরাজি তথা নেয়ামত আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও আপনার।
>> আপনার কোনো অংশীদার নেই।
মনে রাখা জরুরি
তালবিয়া আরবিতেই পড়তে হবে। আর তা হতে হবে বিশুদ্ধ। যারা বিশুদ্ধভাবে তালবিয়া পাঠ করে পারেন না। তাদের জন্য বিশুদ্ধভাবে তালবিয়া শেখা আবশ্যক। এবারও লাখ লাখ হাজি সারা বিশ্ব থেকে হজ পালন করবে; তাদের উচিত বিশুদ্ধভাবে তালবিয়া শিখে নেয়া।
তালবিয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণায় ইহরামের পর একবার তালবিয়া পাঠ করা শর্ত আর হজের পুরো সফরে বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করা সাওয়াব ও কল্যাণের কাজ। হাদিসে এসেছে-
>> হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যখন তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার (তালবিয়া পাঠকারীর) ডান-বামে যত পাথর, গাছ ও মাটি ( আছে, এ সবই) তার সঙ্গে তালবিয়া পড়তে থাকে। এমনিভাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত গিয়ে তা (পড়া) শেষ হয়।’
>> হজরত আবু বরক ছিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন ধরণের হজ সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘আলআজ্জু, ওয়াছছাজ্জু’। অর্থাৎ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ এবং কুরবানি করা।’
>> হজরত খাল্লাদ ইবনে সায়েদ ইবনে খাল্লাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার কাছে জিবরিল আলাইহিস সালাম এসে বললেন যে, আমি যেন আমার সাহাবিদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ প্রদান করি।’
এবারের হজের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত প্রস্তুতির দ্বারপ্রান্তে হজ পালনেচ্ছুরা। প্রত্যেক হজ পালনে ইচ্ছুক আল্লাহর মেহমানদের উচিত হজের সফরের অন্যতম তাসিবহ ও শর্ত তালবিয়া সঠিকভাবে শিখে নেয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ পালনে ইচ্ছুক আল্লাহর মেহমানদের হজকে সহজ করে দিন। তালবিয়াসহ হজের যাবতীয় নিয়ম ও বিধান যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।